এক পরিবর্তিত শরীর ! - পর্ব 1
এক পরিবর্তিত শরীর !
তামানি চিত্র প্রদর্শনীর আজ জোর কদমে এগিয়ে চলেছে । ঘরের মধ্যে খুব মৃদু আলো জ্বলছে । কেবলমাত্র রিয়েলিস্টিক ছবিগুলোর ওপরেই উজ্জল আলো রাখা হয়েছে ।
নানান ধরনের দর্শক ও বোদ্ধা গ্যালারীর চারদিকে ঘুরে ঘুরে চিত্রগুলো দেখছে। কেউ বা হাতের কার্যসুচিতে কোনও নতুন শিল্পীর কাজের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে নেওয়ার চেষ্টা করছে ।
চুমকি লাহিড়ী তার প্রোগ্রামটা হাতে ধরে আছে । হল ঘরের ঠিক মধ্যিখানে একটা ক্রোমের ফ্রেমের কাচের মধ্যে রাখা তারই একটা মোমের মতো মানুষের মুখমণ্ডলের প্রতিকৃতি রাখা আছে । অনেকেই সেই প্রতিকৃতির প্রশংসা করছে ।
চুমকি লাহিড়ী কিন্তু দেখতে পাচ্ছে সেই ক্রোমের ফ্রেমের মধ্যে থেকে - মুকুলের বিবর্ণ চোখ দুটো তার দিকেই নিবদ্ধ । ওর ঢেউ খেলানো স্বর্ণাভ চুলের কুচি সাদা চুলের সঙ্গে মিশে মৃদু মৃদু হাওয়ায় যেন উড়ছে । ওর মুখের নিচের পাতলা ঠোঁট এমন ভঙ্গিতে বেঁকে রয়েছে যেন চুমকি লাহিড়ীর শৈল্পিক প্রতিভাকে বিদ্রুপ করছে ।
- এটা ভাবলেই তার এখন মাথায় আগুন জ্বলছে ও নিজের প্রতি ঘেন্না করছে - এই ধরনের একটা অনুগৃহীত ও দায়িত্বহীন মানুষের সঙ্গে – দু সপ্তাহ আগে পর্যন্ত সে কাটিয়েছে ।
একদিন রাতে নৈশ আহারের পর – টি ভিতে সিরিয়াল দেখার পরেই মুকুল চাপে পড়ে স্বীকার করলো – সে - চুমকির প্রিয় বান্ধবী ভানুপ্রিয়ার সঙ্গে প্রেম করছে ! এত স্পর্ধা ওর ! - আমার কথা ভুলেই গেল ! ঘনিষ্ঠদের কাছ থেকে এও শুনেছে ভানুর সঙ্গে কোথায় কোথায় বাইরে গেছেও । সে তো ভেবেছিল মুকুল অফিশের কাজেই বাইরে গেছে ।
এইরকম একটা মেরুদণ্ডহীন কীটকে খুন করতে খুব একটা বিবেক দংশন হয় না। তার জন্যে মাংস কাটার ছুরিটাই যথেষ্ট ছিল । ঠিক হৃদপিণ্ডের উল্টোদিকে পিঠেই ছুরিটা গেঁথে বসিয়েছিল । - তারপর গরম ইস্ত্রী দিয়ে ক্ষতস্থানের ওপর সমান করে – তার ওপর সংরক্ষণ–লোশন দিয়ে দেওয়া ।- ব্যস ! একেবারে মধ্যযুগীয় মুখোশের প্রতিচ্ছবি ও দেহাবশেষের পুনর্ব্যবহার - এই প্রদর্শনীতে বেশ ভালভাবেই মানিয়ে গেছে !
এখন তো সবাই মূর্তিটার প্রশংসাও করছে !
( এই গল্পটা এডগার এলান পোএর লেখা কিনা ঠিক বলতে পারবো না । আমি যেসব গল্প পড়েছি – তার মধ্যে এটা নেই । কিন্তু গল্পটার মধ্যে পোএর প্রভাব স্পষ্ট !)
মনোজ

আরো পড়ুন
- 1