• 1

মলয় আসিয়া

null says: null

একটা গান হঠাৎ শুনতে শুনতে একজনের কথা মনে পড়ে গেলো। এই সব গানের স্মৃতিচারণে আমাদের শৈশব-কৈশোরের একটা মেদুর পর্যায় পায়ে পায়ে এসে সামনে দাঁড়ায়। এইচ এম ভি'র শারদ-অর্ঘ নামক বইটি, যেটি হাফ-ক্রাউন সাইজে ছাপা হতো। শিল্পীদের প্রতিকৃতির পাশে দু'টি গানের লিরিকসহ গীতিকার-সুরকারের নাম। শাদাকালো ছবি, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আর মাধুরী চট্টোপাধ্যায়ের  ছবি বদলাতো না। ভূপেনদার গুর্খা ক্যাপ, চোখে রেব্যান কালো কাঁচ, প্রতিবার একই রকম। যতোদিন ইশকুলে ছিলুম, বইয়ের দোকানে গিয়ে নাড়াচাড়া করতুম বইটি। কলেজে ওঠার পর কিছু পয়সা বাঁচিয়ে কিনে ফেলতুম। তার পর রোববার আড়াইটা বাজলেই রেডিওর সামনে বসে পুজো করার মতো নিষ্ঠায় পছন্দের গানগুলি গলায় তোলার চেষ্টা। প্রথমে মান্না'দা, তার পর মানবেন্দ্র বা শ্যামল, হেমন্তও। কলেজে শোনাতে হবে, সে কি চাপ।
-------------------------------
যতোদূর মনে পড়ছে ১৯৬৫-৬৬তে আমার মামাশ্রী একটা জলসা শুনে এসে বাড়িতে উচ্ছ্বসিত ঘোষণা করলেন, তোদের মান্না দে'র অন্ন উঠলো এইবার। আমি তো তখন নেহাৎ বালক, প্রায় শিশুও বলা যায় গানের বিচারে। তাঁর দিদি, মানে আমার মা বলেন, কেন রে? মামা একেবারে ঘোরগ্রস্ত হয়ে বলতে থাকেন, কাল বুঝলি একটা ছেলের গান শুনলাম, কোথায় লাগে মান্না দে? শুরু করলো একটা গান দিয়ে , " শ্রীমতী যে কাঁদে" কী রেঞ্জ রে বাবা, আর তেমন মিষ্টি। এবার পুজোয় নাকি রেকর্ড করেছে। মা বলেন, বেশ অনুরোধের আসরে শোনা যাবে এখন। তাই হলো এই গানটি বেশ কিছু মাস ধরে অনুরোধের আসরে বাজবেই। অন্য গানটা, " কিছু নেই, তবু দিতে চাই", সেটাও হতো। আমি তো তখন থেকেই মান্না দে'র একান্ত পাখা। খুব অবোধভাবে মা'কে প্রশ্ন করি, মা, এর পর কি আর কেউ মান্না দে'র গান শুনবে না? মা হাসেন।
-----------------------------------------
তার পরেই একদিন স্থানীয়সংবাদে খবর তরুণ গায়ক মলয় মুখোপাধ্যায় একটি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। পিছু পিছু আনন্দবাজার। আমার মামা তো তো প্রায় অন্নজল ত্যাগ করার মতো অবস্থা। বাবা বললেন এও তো দীপক মৈত্রের মতো-ই হলো। বহুদিন আগে এই গায়ক একটি সফল রেকর্ড করে গত হয়েছিলেন।
---------------------------------
আরো বয়স হতে "শ্রীমতী যে কাঁদে" গলায় তুলতে পারলুম কি না জানিনা। সি-শার্পে তার সপ্তকে ধৈবত পর্যন্ত যায় প্রথম বিস্তারটি। এলেম লাগে। ঐ রেঞ্জটি তার পরে শুনেছি শুধু মান্নাদার গলায় "ও মেরি জোহরা জবিঁ" আর " যখন কেউ আমাকে পাগল বলে"র মুখড়ার বিস্তারে। গানের চলনটি একেবারে মান্নাদার স্টাইল, কিন্তু স্কেল আর সুর লাগানো মানবেন্দ্রের ঘরের। একটা মাত্র রেকর্ড করে ঐ পর্যায়ের খ্যাতি এবং তার পর ট্র্যাজিক নায়কের প্রতি ভালোবাসা, বাংলার শ্রোতাসমাজ মলয় মুখোপাধ্যায়ের প্রতি উজাড় করে দিয়েছিলো।
অবশ্য আরেকটা কথা বলা হলোনা । এখন যখন মলয় মুখোপাধ্যায়ের গান'দুটি শুনি, তখন মনে হয় মলয় তাঁর সমসাময়িক জটিলেশ্বরের ধরণটাই নিয়েছিলেন। প্রায় একই সময়ে রেকর্ড হওয়া  " কে যেন আমার কানে কানে বলে গেলো" বা "পাগল হাওয়া"য় জটিলেশ্বরের ছাঁদটি যেন অবিকল মলয়ের গানের মধ্যে পাচ্ছি।
---------------------------
সব পলাশই শেষ পর্যন্ত ফোটেনা। তবু বসন্ত এসেই যায়। প্রিয় কবির কয়েকটা শব্দ ছড়ানো থাক এখানে,

'অমিল পয়ার ছন্দে রচিত বসন্তকাল শেষ হয়ে এলো।
পথের উপর আজ দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ দেখলাম চারিপাশে মাঠ
কালো কালো ধান গাছে ঢাকা আছে, এই সব সুমুদ্রিত ধানগাছগুলি
আমার এ জীবনের বসন্তের অভিজ্ঞতা।
.... আমার ভরসা এই প্রাকৃতিক নিয়ম রয়েছে
স্বভাবত কিছু রস ঝরে যাবে মাঝে মাঝে বসন্তসন্ধ্যায়।' (বিনয়)

says:
শ্রী সাফল্যর জন্য আয়ু ও একটা বড় ফ্যাক্টর| গীতা দত্ত বেশ কিছুদিন থাকলে‚ আশাকেও হয়তো করে খেতে হত না 🙁
says:
শিবাংশু গীতা‚ আশা ও মাঝখানের হাইফেন ওপিজি'কে নিয়ে একটা লেখা তৈরি হচ্ছে| শেষ হয়ে গেলে এ নিয়ে একটা আইডিয়া হয়ে যেতে পারে|☺
says:
ঝরাপাতা এই গানটি আমি আগে কখনো শুনিনি। এমন একটি দুর্লভ গান শোনানোর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
undefined says: undefined

আরো পড়ুন