হেমন্তের দেবী
হেমন্তকালটার ঠিক কোনও নিশ্চিত লক্ষণ নেই। বৃষ্টি নেই, শীত নেই, রোদটাও নরম, ফুলও ফোটেনা। স্পষ্ট হয়ে কাছে আসেনা বলে তার আবেদনটা খুব রহস্যময়। ধীরে ধীরে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যাচ্ছে যে ট্রেনটা তার একটা জানালায় গালে হাত দিয়ে বসে থাকা একটি মেয়ের মুখ যেন। এক পলক মনে হয় তাকেই তো খুঁজছিলুম কতোদিন ধরে। দ্বিতীয়বার সে আর চোখে ধরা দেয়না। মনের মধ্যে রয়ে যায়। অস্পষ্ট, অধরা। শুধু টানটাই থেকে যাবে বহুদিন। একেই কি হেমন্তের পিছুটান বলে।
পুরীতে তো সারাবছরই গ্রীষ্ম। কখনও জ্বলন্ত, কখনও ঘর্মান্ত। তার অন্ত নেই কখনও। কালীপুজোর সময় বারুদের হিমন্ত বাষ্পে ভারি হয়ে সন্ধে নেমে আসে বালুবেলায়। পুরী হোটেল থেকে স্বর্গদ্বার পর্যন্ত সারা রাস্তায় সরাইখানাগুলো নিজেদের সাজিয়ে রাখে ঝিকমিক জোনাকির ফোঁটা ফোঁটা আলোয়। কলকাতা থেকে পালিয়ে আসা মধ্যবিত্ত বাঙালিরা দিনের বেলা বার্মুডা-নাইটি আর সন্ধে হলে পাঞ্জাবি-পাজামা , শলোয়ার-কামিজে ফুটপাথ ভরিয়ে রাজার মতো। মশলামুড়ি। দাদা-বৌদির দোকানে রুমালি রুটি দিয়ে চিলিচিকেনের অর্ডার দেয়। অদূরদর্শীরা স্বর্গদ্বার বাজারে চড়াইয়ের শেষে, খাজার দোকানের পিছনে সুরাসন্ধান করে। ঠিক পাশেই রয়েছে ওষুধের দোকান। লাইন দিয়ে হাঁপানি আর হজমের ওষুধ খোঁজা অবিরত চেনা মুখ।ঝলমলে শাড়ির দোকানে উপচে পড়া ওড়িশার ঐশ্বর্য। কাটাতেলের বিক্রম অটো ছিদ্রহীন ভিড়ের মধ্যে পথ করে ছুটে যাচ্ছে মন্দিরের রাস্তায়। বাজার সমিতির পুজোমণ্ডপে দেবী কালী পূজিত হবার অপেক্ষায় ঝলমলে সাজ পরে রেডি। বদনগঞ্জ-আরামবাগ থেকে আসা কম রেস্তোর রাতের পর্যটকেরা খাজা আর ছেনাপোড়ের সম্বল গুছিয়ে থানার কাছে পার্ক করা বাসের দিকে ধাবমান। এই অটো, কতো লেগা?
দশ মিটার অন্তর ফুলঝুরি, তুবড়ি, রংমশাল নিয়ে বাচ্চারা, বাবারা, দাদারা বছরকার দিনে আলো দেখাচ্ছে অন্ধকার আকাশের তারাদলে। আমরা বেড়ুবেড়ু করতে করতে মহোদধির পার্কিঙে রাখা গাড়ি বার করে চলে যাই এক ও অদ্বিতীয় চাঙ-ওয়ায়। চক্রতীর্থের দিকে আলো জ্বলেনা ততো। রাতের বেলা রাস্তাও খালি। আজ আর দেবীর সঙ্গে নিশিজাগর নেই। ঢেউয়ের স্তিমিত শব্দের আবহে কার্তিক অমাবস্যার রাত ধীরে ধীরে বাড়ি ফিরে যায়।
দারুন লাগলো আপনার ঐ 'যে ট্রেনটা তার একটা জানালায় গালে হাত দিয়ে বসে থাকা একটি মেয়ের মুখ যেন। - ইশস ! কতবার যে এই পরিস্থিতির সন্মুখিন হয়েছি - কিন্তু তখন মনে পড়েনি কেন - এই উদাহরণ !
ব্যক্তিগতভাবে পুরী আমার খুব খারাপ লাগে ! এমন কি ঢেউগুলো পর্যন্ত মনে হয় - এটা তো আগেই গুনে রেখেছি ! সারাক্ষন ফিরিওলাদের জীবনরক্শার দাপট - চোখের ওপর ক্রমাগত ব্যাটারীর আলো | আর নির্জনে ওদের বিখ্যাত অসভ্যতার দাপট ! - সে তুলনায় বরং গোপালপুর অনেক ভালো ! বেশ নির্জন - শন্তিপ্রিয় !
সে যাইহোক‚ আপনার লেখা পড়েও ভালো লাগে !
মনোজদা


আরে না না| আগের ছবি| অগুন্তিবার গেছি ওখানে| প্রায় লোক্যালই বলা যায়...


আরো পড়ুন
- 1