পায়ের ধুলো {
কাল একজনকে – অবশ্যই কোন ছাত্রকে - বলতে শুনলাম – স্যর একটু পায়ের ধুলো দেবেন !
খুব দ্বিধায় পড়ে গেলাম ! পায়ের ধুলো দেবটা কি করে ? পায়ের ধুলো কি জল নাকি যে – ঘর থেকে এক গেলাস জল এনে দেবো ! আবার আমরা কেউ বাড়িতে পায়ে ধুলো-কাদা নিয়ে থাকিও না – যে পা থেকে ধুলো ঝেড়ে দেবো ! – অনেকে এ কথাও বলে বটে – বাবার পায়ের একটু ধুলো আনিস – যা লাগে দিয়ে দিস ! – যা লাগে দিয়ে দিস – কথাটার মানে কিন্তু ভালোই বোঝা যায় ! ওটা অর্থনীতির অংশ ! দ্বিতীয়টা ?
অবশ্য শুনেছি আজকাল নাকি প্যাকেটে করে বাবাজি বা মাতাজি দের পায়ের ধুলো পাঠানো হয় – দেশ-বিদেশের ভক্তদের ডেলিভারির জন্যে ! কিন্তু কখনো চাক্ষুষ হয় নি – প্যাকেটের ভেতর সত্যি কি থাকে ! তবে সত্যি কেউ কি আশা করে রাস্তা থেকে ধুলো এনে প্যাকেটে ভরে বিক্রি করছে ?
তবে ছাত্রাবস্থায়ে দুবার মাধ্যমিকে ফেল করার পরে মা নিয়ে গেল শালকিয়ায় এক ১০১ সাধুবাবার কাছে । অনেক প্রনামী ও অনুরোধের পরিবর্তে সেই ১০১ বাবা একটা মাদুলি দিলেন । - রোজ সকালে এটা কপালে ঠেকাবি । পাশ করলে গঙ্গার জলে ভক্তিভরে ফেলে দিবি । - ফেল করলে এটা নিয়ে আবার আসবি । ফেল করে শ্রীল বাবার কাছে যেতে – দেখা গেল মাদুলির ভেতর ছোট্ট কাগজে ‘ফেল’ কথাটা লেখা আছে বটে ! – কিন্তু সে তো ভাগ্যের ‘লেখা’ ! ধুলোর ব্যাপার নয় !
কিন্তু আমার ধারনা – পায়ের ধুলো মানে – কমন্ডুলুতে রাখা অথবা পুজোর কোন পাত্রে জলের মধ্যে – গঙ্গার জল হলেও চলে – একটা গাঁদা ফুলের ছোট্ট একটা টুকরো মেশানো । আশীর্বাদক বা পাদোদক ! এর আরেকটা নাম চরণামৃত – সেটাই কপালে ঠেকিয়ে মুখে ঠেকানো !
কিন্তু ঠিক মিলছে না ! সবাই বলে চরণামৃত পান করেছে! কেউ তো বলে না ‘পায়ের ধুলো’ পান করেছে !
এবার আমার যা বুদ্ধি – সেই অনুসারে ব্যাখ্যা করি । একটা স্ট্যাটিউটরি সাবধানবানী দিচ্ছি - ব্যাখ্যা কিন্তু অনেকেরই পছন্দ হবে না !
পায়ের ধুলো বললে – সেই ধুলোর একটা ওজন – যত কমই হোক আশা করা যায় । অন্তত এক গ্রাম – বেশি হলে ভক্তরা অখুসী হবে বলে মনে হয় না ! ডাক যোগে পাঠানো হবে বলে কথা ! – আমরা প্রথমে যখন আমেরিকা যাই – তখন আত্মীয়দের অনুরোধে – উদ্ভট সব জিনিস নিয়ে যেতে হয়েছিলো । লুচি বেলার যন্ত্র থেকে নানান রকমের মাদুলী ইতাদি – এবং বাঘ-নখ নামে কিছু ! সে পদার্থটা যে সঠিক কী – এখন আর মনে পড়ে না ! লুচি বেলবার যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই ব্যবহার হয়েছে বলে মনে হয় না । কিন্তু তার একটা ওজন ছিল । সেটা আবার প্লেন ভাড়ার সঙ্গে যোগ হয়েছিলো – যত কমই হোক !
২০২১ সাল নাগাদ কোথা থেকে করোনা বলে এক উৎপাত এসেছিল । তারই হাত থেকে বাঁচবার জন্যে প্রতিষেধক নিতে হল । একবার নয় দু-বার । তখন ইঞ্জেকশান ব্যাপারটা একটা সোশ্যাল স্ট্যাটাসে পরে গেল ! কারুর সঙ্গে দেখা হলে – প্রথমেই জিগ্যেস করে – ইঞ্জেকশান নেওয়া হয়েছে ? – না বললেও বিপদ , হ্যাঁ বললেও বিপদ ! – না বললেই প্রায় হাত ধরে নিয়ে গিয়ে ইঞ্জেকশান নেওয়ার উপদেশ দেবে । হ্যাঁ বললে – তাদের কেন নেওয়া হয় নি ত্র কাহিনী শোনাবে পরবর্তী সময়টা ! - ইঞ্জেকশান টিঞ্জেকশান নিতে আমার ঘোরতর আপত্তি থাকলেও আমার স্ত্রীর খুবই উৎসাহ । অতএব রোদ্দুর ভীড় - মাথায় নিয়ে ভয়ে ভয়ে সেই ভয়াল ইঞ্জেকশান নিতেই হল । বাঘের হাত থেকে বাঁচতে পড়লাম গিয়ে কুমীরের সামনে ! কি যেন কথাটা – ঝালের হাত থেকে পালাতে গিয়ে তেতুলতলায় বাস ! – সেই প্রাথমিক পর্যায় কোন ডাক্তার বৈজ্ঞানিকই জানত না কিসে কি হয় ! – দ্বিতীয় ডোজে নাকি চুলকানি হতে লাগলো ! – কেউ বলল – এটা সাধারন চুলকানি – কেউ বলল এটা প্রতিষেধকের বাই প্রোডাক্ট ! কেউ বলল এলার্জি ! – কিন্তু আমি নিশ্চিন্ত হলাম – একদিন টি ভিতে একজন বিশেষজ্ঞ রায় দিলেন – দ্বিতীয় ডোজের ফলে এক ধরনের এলার্জি চুল্কানির আকারে এসে গেছে !
অতয়েব আমার সেই দ্বিতীয় ডোজের ঠেলা সামলাতে – দিনের পর দিন ডাক্তার ওষুধ আর চুলকানি ! ওষুধ – খাবার ও গায়ের ক্রীম, সাবান ও বেগুন খাওয়া বন্ধ । কেউ বলল গায়ে তেল লাগিও না কেউ বলল – কেউ বলল তেল লাগাও !
ক্রমশ সেই আবিষ্কারটা পরিষ্কার হয়ে যেতে আরম্ভ করলো ! চুলকাতে চুলকাতে পায়ের থেকে মরা চামড়ার পাপড়ির টুকরোগুলো যাকে বলে ‘মরা মাস’ পড়তে লাগলো । পনেরো মিনিট ধরে চুলকালে মেঝেতে অনেকটা পরিমান সাদা হয়ে যায় – সেগুলো জরো করলেই মোটামুটি - !
আমি এখন তক্কে তক্কে আছি – কেউ পায়ের ধুলো চাইলেই – যে ধুলোগুলো জমিয়ে রেখেচ্ছি- সেখান থেকেই – না-হয় - !
দেখতে চাইছি পায়ের ধুলো প্রকাশ হয় কিনা - - !
তবে পায়ে একটু না একটু ধুলো লেগেই থাকে সে আপনি যতই ধুলো ঝাড়ুন না কেন| ঐ পেন্নাম করলেই যে ধুলোটুকুনি উঠে আসবে সেটাই পায়ের ধুলো|
গুরুদেব বলে কথা‚ তার লেগ ডাস্টের দাম তো হবেই| তবে আপনাকে গুরুদেব বানালে বেশ হয়|
বৌদি কেমন আছেন মনোজদা?
আর টকের জ্বালায় পালিয়ে গিয়ে তেঁতুল তলায় বাস

আরো পড়ুন
- 1