• 1

আমাদের বাংলা লাইব্রেরী !

null says: null

 আমাদের বাংলা লাইব্রেরী !

আজ প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে – একটা চালা-ঘরের ভেতর দাঁড়িয়ে ঝড় বৃষ্টির দাপট উপভোগ করার চেষ্টা করছিলাম ! – হে হে – বয়েস যদিও তিনকাল – তবু ভেলপুরির স্বাদ কি ভোলা যায় ! কিন্তু সবার বৃষ্টিতে ভেজার সখ নাও থাকতে পারে !

একেবারে ভিজে যাবার আগে একজন বলল – ওপরে লাইব্রেরীতে গেলে কেমন হয় ! – এটা মন্দ নয় ! চারতলায় একটা লাইব্রেরি আছে বৃদ্ধাবাসের । গেছিও বটে – কিন্তু নিয়মিত যাওয়া হয়ে ওঠে না ! – তো এখন যাওয়া যেতে পারে !

লাইব্রেরীতে এসে দেখি – আপাতত কেউ নেই – আমরা ছাড়া ! বেশ ঝকঝকে পরিষ্কার ! আছে সাত আটটা বই ভর্তি আলমারি ! বই দেখলেই এখনো কিছু লোকের মনের জিহ্বা লকলকায় – আমিও সেই শ্রেনীর ! পড়ি বা না-পড়ি – তবু মনের ভেতর একটা আত্ম-তৃপ্তির ভাব আসে !

কত রকম বই । ইংরিজি বই আছে বেশ কিছু ! কিন্তু দই রসগোল্লা ছেড়ে লাড্ডু খায় কোন বাঙ্গালি ! বাংলা বই – সে রসকস-হীন ধর্মের বই থেকে, ভুত থেকে রহস্য-ঘন ডিটেক্টিভ বই ! – মানে যাদের নিজেদেরই বাড়িতে ঠাই হচ্ছে না – তাদের সব বই কাগজ-ওলার কাছে যাবার আগে ট্রাঙ্ক-ভরতি হয়ে এখানে জড় হয়েছে ! এখানে যাহক বই পড়ার শেষতম প্রজন্মের কিছু প্রাণী আছে ! আমার বইয়ের ভবিষ্যৎ ঠিকানাটাও দেখা যাচ্ছে এখানেই !

বেশ কটা বই ঘেঁটে দেখলাম! মোটামুটি বাকি জীবনটা কেটে যাবে মনে হয় ! কত রকমের বই ! একেবারে নতুন থেকে ধুলো ধূসরিত – মলাট ছেঁড়া – কিছু বিবর্ণ পাতাও ছেঁড়া - ! তা হোক – তবু তো বাংলা বই !  আবার বেশ কিছু বইও আছে – দুটো করে ! আগে আগে বিয়ে বাড়িতে প্রীতি উপহার এসে যেত একাধিক - দুটো ‘সাগর থেকে ফেরা’ বা তিনটে ‘সুখী দম্পতি’! – এখানেও রয়েছে ‘বাংলার ইতিহাস’ দুটো সত্যজিৎ-সমগ্র দুটো – প্রায় নতুন ! আর আছে সারদা মা বা নানান বাবা বা মায়ের প্রচুর বই ! ও, আবার দেখলাম – কাছাকাছি এক প্রকাশালয় থেকে একগাদা বই প্যাক করে দাতব্য করেছে !  

কেনা যখনই হোক – পাতা উলটানো হয়েছে কিনা – সন্দেহ ! বইয়ের মালিকের নাম পর্যন্ত লেখা নেই ! বইয়ের মলাট উল্টলেই লেখা থাকত – ‘শুভর বিয়েতে প্রীতি উপহার – ছোট মাসিমা – ১৯৬০’ – দেখে বোঝা যেত শুভকে উপহারস্বরূপ দিয়েছে তার ছোট মাসিমা – ১৯৬০ সালে ! সে সময়ে উপহার হিসেবে বই দেওয়া রেওয়াজ ছিল ! সেসব দেখেও কিছু আঁচ করা যেত !

এই প্রসঙ্গে বলি – বেশ ছোটবেলায় – পিতামহকে কেউ নিমন্ত্রন জানালে – আমাদের কেউ – দাদুর লেখা একটা বা দুটো বই নিয়ে গিয়ে হাজির হতাম বিয়েবাড়িতে ! – তখন ঐটাই চল ছিল ! বোকা বোকা মুখ করে – খেয়ে বা না-খেয়ে চলে আসতাম ! হ্যাঁ – আমার এরকম অভ্যেস ছিল ! ভিড় ভাট্টা দেখলে – চলে আসতাম । বাড়িতে ফিরে – পেটে খিল মেরে থাকতাম ! মুস্কিল হতো – দাদু যখন জানতে চাইত – কি খেয়েছি ! সেটা আরও যন্ত্রণাদায়ক হতো ! বানিয়ে বানিয়ে বলতাম ! নেমন্তন্য বাড়িতে মোটামুটি একই রকম মেনু হতো ! – কিন্তু পেটে খিল মেরে বানিয়ে বানিয়ে বলা - - !

যাচ্চলে হচ্ছিলো কথা লাইব্রেরির – চলে গেল গরু শ্মশানে !
তবে ছোট্ট লাইব্রেরী দেখেছিলাম – ভার্জিনিয়ায় ! খুব সুন্দর একটা কুঁড়েঘর এর মতন দেখতে ছোট্ট আলমারির ভেতর চারদিকেই সাজানো বই ! ইচ্ছে করলে বই নেওয়া যায় ! কোন লাইব্রেরিয়ান নেই – কোন এন্ট্রি নেই – জমা দেবার নির্দিষ্ট তারিখও নেই ! – আবার ফেরত দেবার সময়েও আলমারির ডালা খুলে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে দেওয়া যায় ! এই নিয়ে কিছু লিখেছিলাম এখানে !

আপাতত আমাদের এই লাইব্রেরীটাও প্রায় সেই রকম ! – যে কোন বই নেওয়া যায় ! যতদিন খুশি রাখা যাবে – পড়া হলে - গিয়ে রেখে দিলেই হল ! – না দিলেই বা কি হয় !       

মনোজ

says:
জল বাহ মনের মত একটা জায়গা মনোজদা|

কি কি বই পড়লেন মনোজদা?
says:
মনোজ ভট্টাচার্য জল ও মুনিয়া‚

একটা বই - বিজয়া রায়ের 'আমাদের কথা' - নিয়েছিলাম ! কিন্তু শেষ করতে পারিনি ! বাড়ি থেকে গত ২১ সালের কটা শারদীয়া সংখ্যা এনেছিলাম - সেগুলো শেষ হয়ে গেল !
একটা বই - রাধারমন মিত্রের - কলকাতা দর্পন - এনেছিলাম - এতদিনে সুযোগ পেলাম পড়বার ! কলকাতার ইতিহাস - বেশ ইনটারেস্টিং !  - জল বিশেষ করে - কখনও সুযোগ পেলে পড়ো ! পুরানো ক্যালকাটানদের কথা আছে !
বই কিছু দেখে রেখেছি - আনবো !

মনোজদা
undefined says: undefined

আরো পড়ুন