• 1
  • 2

যাযাবরের নেপাল ভ্রমণ - পর্ব 5

null says: null

দেখতে দেখতে দুটোদিন  দ্রুত কেটে গেল| আজ সকাল থেকেই আকাশের মুখভার| চারিদিকে কুয়াশার পাতলা চাদর বিছিয়ে আছে| সেই সঙ্গে প্রচন্ড ঠান্ডা হাওয়া| আমাদের রুমের ঠিক নীচেই আজ সকাল থেকেই চলেছে আগুন পোহানো| ফুটন্ত গরম জল যেন মুহুর্তে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে| এদের এখানে সোলার প্যানেল প্রতিটা ছাদে বসানো| এই হোটেলের ছাদের দুদিকে গোটা আষ্টেক করে মোট ষোলোটি প্যানেল দেখলাম| সারা ছাদে পায়রার বিষ্টা ভর্তি| ছাদ থেকে একটু দূরে দেখা যাচ্ছে প্রচুর মোটর গাড়ি| ওটা সম্ভবত কোন গ্যারেজ| আমাদের হোটেলের বাউন্ডারি দিয়ালের পাশেই JCT প্রচুর ক্রেন‚ আনুমানিক গোটা পঞ্চাশেক তো হবেই| মুল সদর রাস্তার  ওপর দিয়ে গাড়ি চললেও সংখ্যায় নগন্য বলা চলে|

নিচে চলছে জলখাবার পর্ব| আমরাও বসে পড়ি| ভোরবেলা অবশ্য আমাদের বেড টি আর বিস্কিট সার্ভ করা হয়েছিল| গরম গরম লুচি আর আলুর তরকারি| গোটা চারেক সাবাড় করে দি| এমনিতেই এতদিনের বুভুক্ষু আমি| কদ্দিন লুচি‚ ভালো খাবার দাবার খাই না| এখানে তো আর সেদ্ধ-সাদ্ধা আমার জন্য কেউ করবে না আর করলেও খাচ্ছি না| দেশের প্রান্তরেখা পার করার পর থেকেই আমার শরীর বেশ চনমনে| অনেকটা এই কারণেই বের হওয়া| একটা চেঞ্জ সত্যিই দরকার ছিল| আরও দুটো লুচি অনায়াসেই খেয়ে ফেলে ভাবছি বাপরে আমার কি খাওয়া বেড়ে গেল| পেটটা না বাড়লেই হয়| অনেক কষ্ট পেয়েছি| বেলা ১১ টায় বের হব আমরা লুম্বিনীর উদ্দেশ্যে| সনাউলি থেকে লুম্বিনীর দুরত্ব প্রায় ৩১ কিমি| নিজেরা তৈরি হয়ে নিয়ে নিচে নেমে গাড়িতে উঠে বসি|

লুম্বিনী‚ একটি ঐতিহাসিক স্থান| বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছে অবশ্য দর্শনীয় একটি তীর্থক্ষেত্র| ৫৬৪ মতান্তরে ৫৬৬ খ্রীষ্ট্রজন্মপুর্বে লুম্বিনীতে জন্মগ্রহন করেছিলেন তথাগত বুদ্ধ| রূপানদেহি রাজ্যের একটি প্রদেশ হল লুম্বিনী| আমাদের ড্রাইভারজী সেই আগের দিনের মতই আমাদের প্রণাম  জানিয়ে সম্বোধন করলেন| ওঁনার এই সম্বোধনটা খুব ভালো লাগে| রূপানদেহি বেশ জনবহুল| হোটেলের পাশাপাশি অনেক বাড়ি আছে| প্রতিটা বাড়িতেই ব্যালকনিগুলো খুব চওড়া| ব্যালকনিগুলো লোহার বা স্টিলের  মোটামোটা বিম বা পাইপের মত বিম দিয়ে ঘেরা| আমাদের কলকাতার মত ব্যালকনিগুলো ক্ষুদ্র আর পুরো গ্রিল দিয়ে ঢাকা নয়| এখানে প্রতিটা বাড়ির ওপরেই একটা করে চুড়ো| প্রতিটা বাড়িতেই ফুলের সম্ভার চোখ টানে| আমাদের ড্রাইভার দেখালো সির্দ্ধার্থ নগরের ছোট বিমানপোত| কুয়াশার জন্য অস্পষ্ট| সামনে লুম্বিনী সাংস্কৃতিক পার্কের প্রথম তোড়নটি| আমরা বেশ কয়েকটি খোলা পার হই| প্রথমে ভেবেছিলাম এগুলি বুঝি খাল কিন্তু তাকিয়ে বুঝি খোলা মানে সরু পাহাড়ী নদীই হবে|  নদীগুলো বর্ষাকালে জলে পুষ্ট হয়ে ওঠে| এখন তেমন জল নেই| প্রচুর নুড়ি আর পাথর ছড়িয়ে ছিটিয়ে| এর মধ্যেই একটা বড় জলাশয়  পার হই|  পাথর কেটে কেটে সিঁড়ি করা| অনেক ডিঙি তীরে বাঁধা| সম্ভবত কোন ঝিল| এখানে দোকান-পাট সর্বত্রই হিন্দী স্ক্রিপ্ট| ইংলিশ প্রায় দেখাই যায় না| হিন্দীতে অ্ত দর নই‚ মোটামুটি পড়তে পারি এই পর্যন্ত| কোনটা কি নদী বা জলাশয় এখানে তেমনভাবে মার্ক করাও নেই‚ যা আছে তাও হিন্দীর জন্য পড়তে পারিনা| যদিও হিন্দী‚ উচ্চারণ অনেকাংশে কিন্তু হিন্দীর মত হচ্ছে না|

লুম্বিনীর দ্বিতীয় তোড়নটিও পার করে যাই| রাস্তাঘাট এখানে ভীষন ফাঁকা| পাবলিক বাস বা গাড়ি তেমন একটা চোখে পড়ে না| কিছু হোটেল আর বিক্ষিপ্ত দোকানপাট নজরে আসছে| হঠাৎ করেই বাস থেমে গেল| একটা  খালি ফাঁকা জায়গায় সার দিয়ে আমাদের তিনটে বাসই দাঁড়িয়ে গেল| এতক্ষণে গাড়ির ভিতরে ঠান্ডা তেমন টের পাইনি| নীচে নেমেই কাঁপুনি ধরে|এতগুলো পোশাক ফুঁড়েও ঠান্ডা যেন শরীরে বিঁধছে| আকাশ এখনও মেঘলা| কুয়াশায় পরিপুর্ণ চারিপাশ| উদ্যোক্তরা টোটো ভাড়া করে| প্রতি টোটো চারজন করে| অনেকগুলো টোটো পরপর রেডি হয়ে যায়| একসাথেই যাবে| লুম্বিনী পার্ক একটা মস্ত জায়গা জুড়ে অবস্থিত| কয়েকশো একর জমি জুড়েই কাজ চলছে| লাল পাথুরে মাটির ওপর দিয়ে চলতে শুরু করল আমাদের টোটো| ঝাঁকুনি আর ঠান্ডার চোটে নাক মুখ সব যেন বরফ শীতল| নাক -কান-মুখ ঢেকেও যেন ঠান্ডা আটকাতে পারছি না| আমরা অবশেষে কাম্বডিয়ার মনেস্ট্রির সামনে এসে হাজির হলাম| ভিতরে ঢুকে চারিদিকের শান্ত পরিবেশ যেন আমাদের আকর্ষণ করছে| এখানে জোরে তো নয়ই ফিসফিস করে কথা বলতেও ইচ্ছে করবে না| এদিকে ওদিকে বিভিন্নরীতির মনেস্ট্রি| কোনটা ফ্রান্সের কোনটা কাম্বোডিয়ার‚ কোনটা জাপানের| মাঝের সরোবরে প্রস্ফুটিত জলপদ্ম| এখানে ফটো তোলা মানা| এক বিশাল কালো কিম্বা কালো মিশ্রিত খয়েরী বুদ্ধমুর্তির সামনে আমরা যেন কত ক্ষুদ্র| বুদ্ধের চোখদুটি যেন জীবিত| যেদিক দিয়েই তাকাই সেদিক দিয়েই যেন তথাগত আমাদের তার অর্ধনিমিলিত নয়নে  দেখছেন| মনে মনে বলি বুদ্ধং শরনং গচ্ছামি| ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে এসে স্বয়ং বুদ্ধ আজ সামনে বিরাজমান| মুর্তিটি মনে হয় কাঠের| চারিদিকে বুদ্ধের বিভিন্ন প্রতিরূপ| কোনটিতে বুদ্ধ তপস্যারত‚ কোনটিতে তিনি তার শিষ্যদের বানী দিচ্ছেন|  এখান থেকে বেড়িয়েই টোটো ড্রাইভার তার ফোনটি হাতে ধরায়| আমরা দলছুট হয়ে পড়েছি| আমাদের বাকি টোটোগুলো সব একসাথে আছে| তড়িঘড়ি আবার সেদিকে দৌড় লাগায় আমাদের টোটো| রাস্তা যেহেতু তৈরি হচ্ছে তাই ঝাঁকুনি খেতে খেতে আমরা এগোতে লাগলাম| পুরোটা একদিনে ঘুরে দেখা সম্ভব নয়| অনেকগুলো বুদ্ধ মনেস্ট্রি আমরা ঘুরলাম আর ফটো তুললাম| এবার আমাদের গন্তব্য  তথাগতর জন্মক্ষেত্র মায়দেবীর মন্দির|

মায়াদেবীর মন্দিরের টিকিটের লাইনের বেশ ভিড়| আমরা সার্ক দেশভুক্ত বলে আমাদের টিকিট এন সি তে ৬০ টাকা| আমরা টিকিট কেটে জুতোঘরে জুতো রেখে রওনা হই| এখানে প্রচুর স্তুপ‚ প্রাচীন পুস্করিণী যেখানে সদ্যজাত সিদ্ধার্থকে স্নান করানো হয়েছিল ইত্যাদি আছে| চারিদিকে এখানেও প্রচুর কাজ চলছে| মায়াদেবীর মন্দিরটি বাঁধিয়ে রাখা হয়ছে| ভিতরে ঢুকলে সেই ঐতিহাসিক যুগে যেন পদার্পণ করলাম মনে হবে| ইতিহাস তার সাক্ষ্য রেখেছে এখানে| প্রায় ধ্বংসস্তুপকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে অ্ত্যন্ত দক্ষতার সাথে| ভিতরে প্রচুর পায়রা| ইতি উতি সিসি ক্যামেরা ও প্রখর পাহারা| প্রচুর নেপালি আর ভারতীয় টাকা ছড়িয়ে আছে| ইঁটগুলোকে কি চুনকাম করা হয়েছে? হয়ত কিম্বা এমনটাই ছিল| একদিকে সিদ্ধর্থের আঁতুড়ঘর| যে শিলাটির ওপর তথাগতের জন্ম হয়েছিল সেটি বাঁধিয়ে রাখা হয়েছে কাঁচ দিয়ে এবং সেখানেও সিসি টিভি ক্যামেরা| বৌদ্ধদের বিশাল ভিড়‚ ভক্তিও তেমন| বেশিক্ষণ দাঁড়াতে দিচ্ছে না| বেরিয়ে এলাম| বেরিয়ে অশোকের পিলার| ওখানে বর্ণিত আছে চন্ডাশোক‚ ধর্মাশোকে পরিণত হয়ে এখানে এসেছিলেন| ১৮৯৬ সালে আবিষ্কৃত হয় এই পিলার| ১৯৯৭ সাল থেকে লুম্বিনী ওয়ার্লড হেরিটেজ প্লেস| আরও অনেককিছুর মধ্যে এখানে বেশিরভাগ স্তুপের ধ্বংসাবশেষ| পায়ে পায়ে ফিরে চলি আমাদের টোটো-ওয়ালেদের কাছে| বেরোনোর সময় একটা ব্রিজ পার করেই চলে আসি যেখানে আমাদের বাসগুলো দাঁড়িয়ে ছিল|

undefined says: undefined

যাযাবরের নেপাল ভ্রমণ - পর্ব 4

null says: null

(৪)

সারারাত তেমন একটা ঘুম হয়নি‚ ক্লান্তি গ্রাস করছে|  কখন যেন ঝিমুনি এসে গেছে| গাড়িটা ব্রেক কষে দাঁড়াতেই ঝিমুনি টুটে গেল| 'এসে গেছি?' ‚ ' না‚ আমাদের বাকি দুটো গাড়ির এখনও দেখা নেই|' কে যেন বলে‚ খেয়াল করি না| দেবাশিসদাকে মিশ্রজী ওখানেই কিছুক্ষন অপেক্ষা করতে বলে| গাড়ির চালকদের সাথে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না| রাস্তাটা হাই ওয়ে| অনেক ছোটবেলায় পিসিমণির সাথে যখন বেড়াতে যেতাম সেই সময়ে যেমন হাইওয়ে দেখতাম অনেকটা সেইরকম| আজকালকার হাইওয়ের আশপাশগুলো অনেক বেশি সাজানো গোছানো | রাস্তার ওপারে ফুটপাতের ওপর ছড়ানো ছিটানো দুটো -একটা দোকান| গাড়ি সারানোর একটা দোকানের সামনে একটা নীচু খাটিয়ায় একটা ছোট্ট বাচ্চা মেয়ে বসে আছে রোদে পিঠ দিয়ে| খাটিয়া জুড়ে ছোট ছোট খেলনা| একটু পরেই তার দাদি বা নানি কেউ একটা এসে তাকে তেল মাখিয়ে আবার জামা-কাপড় পড়িয়ে দিল| স্নান করালো না| এ খুব পরিচিত দৃশ্য| আমাদের পাড়ায় হিন্দুস্থানীদের মধ্যে দেখতাম| বেশি ঠান্ডায় স্নান না করে তারা তেল মেখে জামা-কাপড় পড়ে নেয়| পাশেই একটি দোকান‚ কিসের তা বুঝতে পারলাম না| তার পাশেই একটা ধাবা গোছের| দেবাশিসদা বললেন‚ 'চলুন সবাই চা খেয়ে আসি|' লেমন চা‚ দশ টাকা| দোকানে বেগুনি‚ পকৌড়া‚ চানার ঘুগনী বিক্রী হচ্ছে| আমরা চা খেলাম শুধু| মিস্টি বেশি‚ মশলা চায়ে লেবুর রস| মন্দ না‚ ঐ চলে যায় এই আর কি| একটা গাড়ি আমাদের পাশ করে বেরিয়ে গেল| আরও   একটা গাড়ির জন্য একটু অপেক্ষা  করে আমাদের গাড়িও ছেড়ে দিল| পরে জেনেছিলাম ঐ দুটো গাড়ির যাত্রীরা গোরখনাথের মন্দিরে ঢুকতে পেরেছে| তাই ওদের আসতে দেরি হয়েছে| যাই হোক‚ অনেকটা দূরত্ব অ্তিক্রম করতে হবে| রাস্তার দুদিকে সেই পরিচিত একঘেয়ে দৃশ্য‚ সবুজ আর হলুদের সংমিশ্রণ| অনেক দূরে দূরে একটা আধটা বাড়ি আবার কোথাও কোথাও একতলা সার দিয়ে বাড়ি| রাস্তার দুধারে  অনেকটা দূরত্বে একটা -দুটো চায়ের গুমটি| দেখতে দেখতে বাস সনাউলির কাছাকাছি| চারিদিকে প্রচুর দোকান-পাট| প্রচুর কেনা-কাটা করছে মানুষজন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র| বেশ কিছু নেপালী লোকজনের দেখা মিলল| সব্জি‚ ফল‚ প্ল্যাস্টিক‚ ঝাঁটা‚ গরম পোশাক সবই আছে| দোকানের নামগুলো সব হিন্দীতে| ইংলিশ এখানে প্রায় চলেই না| প্রচন্ড জ্যাম এখানে|  গোরখপুর দিয়ে যারা সনাউলি বর্ডার অ্তিক্রম করবে তাদের পর পর গাড়ি ঢুকছে| এলাকার গাড়িও কম কিছু নয়| ছোট গাড়ি আর বাইকে রাস্তা ভরতি|

ধীরে ধীরে আমরা সনাউলির বর্ডার অ্তিক্রম করার দিকে এগিয়ে চললাম| এখানে আমাদের বাকী দুটো গাড়িকেই দেখতে পেলাম| দুটো গাড়িকেই বর্ডারে আটকে দিয়েছে| জয়দীপদা নীচে নেমে কথাবার্তা বলছে| কিন্তু আমাদের গাড়িটা বর্ডারে কাগজপত্র দেখেই ছেড়ে দিল বেশিক্ষণ দাঁড় করালো না| জয়দীপদা বলে দিলেন হোটেলে চলে যেতে| আমাদের গাড়ি অ্তঃপর এসে দাঁড়ালো মানসসরোবর হোটেলে|  এরপর বাকি কাজ দেবাশিসদাদের| আমাদের রিসেপশনে বসতে বলা হল| জয়দীপদা যে গাড়িতে ছিল অর্থাৎ দ্বিতীয় গাড়িটাও এসে গেল| কিন্তু প্রথম গাড়িটার ড্রাইভার কিছু একটা গড়বড় করে ফেলেছে বর্ডারে গাড়িটাকে কিছুতেই ছাড়ছে না| আর আমাদের জিনিসপত্র ঐ প্রথম গাড়িটাতেই| মিশ্রজী ঐ বর্ডারেই সামলাচ্ছেন| জয়দীপদা এসে হোটেলের রূম অ্যালোট করে দিলেন| রিসেপশন থেকে চাবি নিয়ে যে যার ঘরে গেলাম বটে‚ কিন্তু ফ্রেশ হতে গেলে তো পোশাকগুলো আসা জরুরী| শুধু তাই নয় নেপাল ভ্রমনের টু পাইস তো ঐ ব্যাগগুলোর ভেতরেই বন্দী ছড়িয়ে ছিটিয়ে| নেপালে আসার আগেই জয়দীপদা বলেছিলেন বড় নোট ৫০০ চলে কিন্তু বেশি চলে ১০০ টাকার নোট| তাই একশ টাকার নোটই বেশি| বড় নোট ক্যারি করা সহজ‚ কিন্তু ছোট নোটে ক্যারি করতে গেলে ব্যাগ ফুলে যায়| আমাদের কাছে সবই একশ-র নোট|

খিদেও চাগাচ্ছে| টয়লেটে হাত-মুখ ধুয়ে সাথের শুকনো খাবার আমরা ভাগযোগ  করে খেলাম| ঘরদোর বেশ ভালো| কলে গরম জলও দিচ্ছে| আশে-পাশের রুমের সবাই ফ্রেশ হতে শুরুও করে দিয়েছে‚ এদিকে আমরা বসে আছি| পাক্কা আধঘন্টা পরে ১নং বাসটা আসতে জিনিসপত্র নামানো হল| ফ্রেশ হয়ে  ডাইনিং-এ যেতে যেতে প্রায় চারটে বেজে গেছে| ততক্ষণে  ডাইনিং-এ খেতে বাসে গেছে সবাই| আমরা কজন যা বাকি| ঝটপট পাত পড়ল‚ আমরা খেতে বসেও গেলাম| ছিমছাম ঘরোয়া খাওয়া| ভাত‚ মসুর  ডাল‚ আলু ফুলকপির তরকারি আর মাছের কালিয়া| রান্নার দিদির হাত চমৎকার| সবকটা পদই খুব সুস্বাদু| অবেলায় খেলে আলস্য যেন চেপে ধরে| আজ অবশ্য কোথাও যাবার নেই| আমরা খেয়ে গল্প করতে থাকি| মস্ত উঠোনে বাচ্চারা খেলা করে| মানসসরোবরের ভিতরের দিকের হোটেলে আমরাই প্রথম কাস্টমার| এখনও কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি| হোটেলের পিছনে লোকজন আগুন পোহাচ্ছে| সূর্য পাটে বসতে চলেছে‚ কুয়াশা ক্রমে ক্রমে বাড়ছে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঠান্ডা হাওয়া|

যে যার ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নেওয়াই স্থির করল| সেই মত আমরাও আমাদের ঘরে চলে এলাম| দুপুরে ঘুমানো অভ্যাস নেই| বিকেলে তো আরও নয়| শীতের ছুটির রোববারগুলোতেও আমি ঘুমাই না| ঘুমোবার পর মারাত্মক শীত করে| লাগেজগুলো তোলপাড় হয়ে আছে| ওটা আমার ডিপার্মেন্ট নয়‚ দীপঙ্করের পার্ট| গোছানো-গাছানো  এসবে আমার কাজ ওর পছন্দ হয় না| একদিকে ভালো আমার কোন দায় নেই| আমি খাটের ওপর বসে মোবাইল ঘাঁটতে থাকি| যদিও মোবাইল এখানে আর কাজ করছে না| দেখতে দেখতে সাড়ে ছটা বেজে গেছে| এখানে সময় পনেরো মিনিট এগিয়ে| আমাদের জল কিনতে হবে| আমরা‚ সৃজনীরা তৈরি হয়ে বের হই হোটেলের আশেপাশে|

আমাদের হোটেলটা একেবারে সনাউলি বর্ডারের কাছেই| তাই অনায়াসে বর্ডার পেরোনো যায়| আসার সময় লোভনীয় বাজার দেখেছি গরম পোশাকের| আশে পাশে একটা ট্রান্সপোর্টের গুমটি ছাড়া তেমন কিছু দেখারও নেই| রাস্তা এখানে অনেক চওড়া| রাস্তার কাজ চলছে| রয়েছে বর্ডার সিকিরিটির একটা অফিসও| চারপাশ বেশ ফাঁকা| ঠান্ডার জন্য হয়ত| হোটেলের পাশেই আছে বেশ কিছু ঠান্ডা পানীয়ের দোকান| এক-দুটো মুদি দোকান| কিন্তু সেখানে কোথাও বিসলারি নেই| তখনও আমাদের ভীষ্মের পণ হয় কিনলে নয় বিসলারি| লোকাল প্যাকেজ জল আছে| চায়ের দোকানগুলো খুব ভিড়| পরে ভালো করে দেখে বুঝলাম ওখানে চায়ের দোকান‚ মুদিখানা সর্বত্রই লিকার বিক্রি হয়| আমরা হাঁটতে হাঁটতে বর্ডার পেরিয়ে যাই জলের খোঁজে| রাস্তার ওপর মোমো‚ ঘুগনী‚ চা‚ কফি‚ ফুচকা‚ খেজুর‚ কিসমিস‚ আখরোট‚ নিমকি‚ বিস্কুট সবই বিক্রি হচ্ছে এখানে| গরম পোশাকের দাম এখানে খুব বেশি| এখানে দোকান-পাট নটা থেকে সাড়ে নটার মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়|আমার ঘোরার ইচ্ছে থাকলেও নীপাবৌদি‚ শ্যামলী ওরা চাইল না| ঠান্ডাও বাড়ছে| অবশেষে একটা দোকানে কিনলে মিলল| সেখনেই চা খেয়ে‚   জল নিয়ে সোজা হোটেলে|   তখন সেখানে গরম গরম স্নাক্স পিঁয়াজি আর ধুমায়িত কফি| যত ইচ্ছে খাও| সেখানে খেয়ে দেয়ে আমরা রিসেপশনে চলে গেলাম| একমাত্র এখানেই ওয়াই ফাই কানেকশন মিলছে| ওখানেই আমরা কিছুসময় অ্তিবাহিত করে নিজেদের ঘরে ফিরলাম| রাত দশটায় নামব রাতের খাবার খেতে|

রাত দশটায় নেমে দেখলাম খাবার দাবারের পর্ব শুরু হয়ে গেছে| আমরা বসে পড়লাম| আজ রাতে যারা ভাত খাবে তাদের ভাত যারা রুটি খাবে তাদের রুটি| সাথে মাটন কষা| মাটনটা যাস্ট সুপার্ব হয়েছিল|  দুটো রুটি আর মাটন চেটেপুটে খেয়ে যে যার ঘরে ফিরলাম| এবার লম্বা ঘুম দেব| আমি আর গুল্লু একটা বেডে আর দীপঙ্কর একটা বেডে শুয়ে পড়লাম| হোটেলের পাতলা কম্বল যে এত গরম হতে পারে জানা ছিল না| শোয়া মাত্রই ঘুম|

 হোটেল মানসসরোবরে রিসেপশনে আমরা অপেক্ষারত আমাদের লাগেজের জন্য
 মানসসরোবরের রিসেপশন

undefined says: undefined

আরো পড়ুন