• 1
  • 2
  • 3
  • ...
  • 7

টুকটাক মনে পড়ে - পর্ব 15

null says: null

গতরাতে ভাবছিলাম তৈলাক্ত গামছাখানিকে তৈলমুক্ত করার একটা ভালো উপায় যদি ক্ষার দিয়ে সেদ্ধ করা যায়| আর তখনি স্মৃতি উথলে মনে পড়ল আমাদের সেই লোহার মাঝারি বড় কড়াখানির কথা| কড়াখানিকে শুধু ছুঁয়ে গেছিলাম‚ তাকে নিয়ে তেমন করে কিছু লিখিনি| কিন্তু কাল তার জন্য মনটা যেন কেমন করে উঠল|  আমি অবশ্য খুব বেশিদিন তার ব্যবহার প্রত্যক্ষ করিনি| আলে-কালেই বিশেষ করে শীতকালেই তার ব্যবহার বেশি হত| উঠোনে ছিল দুটো উনুন| একটা তোলা একটা গড়া উনুন| আর সব কাজের শেষে নিভু আঁচে বসিয়ে দেওয়া হত সেই এক কড়াই জল| সেই স্মৃতি এতটাই ফিকে যে লেখার মত  কিছু নেই| তারপর একদিন উনুন গিয়ে কেরাসিনের স্টোভ আর জনতাই প্রধান হয়ে উঠল| তখনি কড়াইয়ের ব্যবহারটা চোখে পড়েছিল| মা কোনদিন ঐ কড়াইতে কিছু ফোটাতো কিনা মনে নেই‚ তবে বিছানার চাদর‚ গামছা‚ পরণের শাড়ি এসব কাইকে ফোটাতে দেখ্তাম| তখন তো আর রেগুলার এত কাচাকাচির ব্যপার চোখে পড়ত না| জামাকাপড় কাচাটাও বেশ একটা ইভেন্টের মত ছিল| বাসি কাজ সেরে স্নান করার আগে কেচেকুচে নেওয়া হত| তার চানটান করে শুদ্ধ কাপড়ে সেসব নিয়ে রওনা হত ছাদের দিকে| ভাত চড়ে যেত তাড়াতাড়ি ভাতের ফ্যান দিয়ে দিয়ে কাপড়ে ম্যাড়  দেওয়া হত| শুকোনোর আগের অবধি ঐ ম্যাড় সকড়ি কিন্তু রোদে শুকোনোর পর সেই শাড়িটাড়িগুলো যে কি করে আর সকড়ি থাকত না সেটা না সেকালে বুঝেছি না একালে| একালে তো মনে হয় ম্যাড় দেবার জন্য সেই ভাতের ফ্যানের ব্যবহার অত আর নেই| আমি তো কোনকালে ম্যাড় ব্যাপারটা দিলামই না| ভাতের ফ্যানের একটা টকো গুমসানি গন্ধ জামাকাপড়ে বের হয় যেটা আমি ঠিক সইতে পারি না|

সেই কড়াইখানা বাকি সময় উঠোনের একধারে ঘুমিয়ে থাকত‚ নট নড়ন-চড়ন| তারপর যেদিন দরকার পড়ত সেদিন কাজে লাগত| একার পক্ষে ঐ কড়াই নামনো বেশ কঠিনই ছিল| বেশ ভারী ছিল আর জলসুদ্ধ তো আরও ভারী| একটা লাঠি দিয়ে জামাকাপড়গুলো তুলে তুলে ওলোট-পালোট করা হত| তখন ছিল সেই  ত্রিকোন গামবুটের মত ভারী সাবান| কেটে কেটে মনে হয় জলে দিত| গলতে সময় নিত| লোহার কড়াই‚ সাবানের গন্ধ‚ আর তাতে তেলচিটে জামাকাপড় ফোটার ফলেই কিনা জানি না একটা মিশ্র সোঁদাগন্ধ বের হত| গন্ধটা কিন্তু আমার বেশ ভালো লাগত| তারপর কখন যেন একদিন বাড়িতে এল ওয়াশিং পাওডার নিরমা| আর তার পর পরই কিনা মনে নেই‚ কড়াইয়ের উপযোগিতা ফুরিয়ে গেল|

শীতের সময় রিঠে দিয়ে যখন সব ভালো ভালো উলেন সোয়েটার‚ শাল ভেজানো হত‚ তখন শুধু তেলচিটে গামছা আর বিছানাদের চাদরের জন্য কড়াই বার করার তাগিদ আর কারও ছিল না| যদিও গরম জল করে  গুঁড়োসবান দিয়ে চটকে মেখে তেলের চিটে ছাড়ানোর প্রক্রিয়া কিন্তু চলত| একেবারেই বেকার হয়ে গেল সেই লোহার কড়াই|

এইভাবেই কখন যেন সে জীর্ণশীর্ণ লোলচর্ম হয়ে গেল| মরচে ধরে গেল তার সারা শরীরে| তারপর শুরু হল পাতাঝরার মত তার মরচে খসে ঝরে পড়া| আর শেষ অবধি তার ঠাঁই হল ভাঙ্গা লোহা বিক্রিয়ালার দোকানে|

says:
মনোজ ভট্টাচার্য    জলি‚

এই বিরাট লোহার কড়াটা তখন ভিয়েনের জন্যে রাখা হতো | রান্না বা লুচি ভাজা ইত্যাদি কাজে লাগতো | আমাদের তিনতলার ছাদে দুটো - একটু ছোটো-বড় - রাখা ছিল | তাতে চড়ে আমাদের ছাদের ওপর ঘুরপাক খেতে কোন অসুবিধে হতো না | খানিকক্ষন পরেই অবশ্য ধমকের চোটে উঠে পড়তে হতো |

আজ আর মনে পড়ে না - আমাদের সেই ডিঙ্গাখানি কোথায় কে বা ভাসিয়ে নিয়ে গেল |

মনোজদা
says:
মনোজ ভট্টাচার্য    মুনিয়া‚

তোমাদের পুরনো পাড়ায় যে পুকুর আছে - সেখানে খোঁজ করে দেখো !

মনোজকাকু
undefined says: undefined

টুকটাক মনে পড়ে - পর্ব 14

null says: null

নোটবুক

...

সেদিন মায়ের ড্রেসিং টেবলটা খুলে পরিস্কার করতে গিয়ে হঠাৎ করেই নজরে এল একটা নোটবুক| সেই কোন সত্যযুগের‚  যখন ঐ নোটবুকটা ছিল আমার কাছে মহার্ঘ্য| কাকার ছিল তিনপিসের প্যাকিং বাক্সের কারবার| হিসাব - পত্র রাখার জন্যই হয়ত নোটবুকটা| কিন্তু আমি যখন ওটা হাতে পাই তখন কাকার কারবার অস্তমিত| তাই ওটা আমাকেই দিয়ে দেয়| ঐ ছোট্ট দু-ইঞ্চি নোটবুকটা তখন আমার ছিল চোখের মণি|  কি লিখতাম ঐ নোটবুকে? খুলে দেখি গুচ্ছের সিনেমার নাম লেখা| দোয়াত কালিতে লেখা আমার দুচোক্ষের বিষ ছিল| কারণটা আর কিছুই নয়‚ নিব ভেঙ্গে যাওয়া| তা তখন শুনেছিলাম ক্লাস ফোরে উঠলেই নাকি কালিকলমে লিখতে হবে| এদিকে কালির সাথে মিত্রতা থাকলেও কলমের সাথে মোটেই সদ্ভাব ছিল না|  কাকার দেওয়াল আলমারীতে সযত্নে রক্ষিত সুলেখা কালি কলমে ভরে কিছু কিছু সিনেমার নাম ঐ নোটবুকে আমি লিখেছিলাম| পাশে কলমের কালি না পড়লে ঝাড়তে হত‚ তার জন্য বিন্দু বিন্দু কালির ফোঁটাও ঐ নোটবুকের যত্রতত্র| কালির সাথে সদ্ভাব মানে লিখতে ভালো লাগুক না লাগুক হাতের আঙুলে ভর্তি হয়ে থাকা কালি ছিল আমি কত কাজের আর কত লেখাপড়া করি তার নিদর্শন|

ঐ অত সিনেমার নাম লিখে রাখার একটাই কারণ ছিল ফুল-ফল-দেশ আর সিনেমার নাম লিখতে গিয়ে যাতে অসুবিধে না হয়| কাকা দোতলার সবুজ সিমেন্টের মেঝেতে পেতে যখন খবরের কাগজ পড়তেন আমি তখন ঐ দ্বিতীয় পাতায় লেখা সিনেমার নামগুলো ঐ নোটবুকে লিখে রাখতাম| শুধু কি সিনেমার নাম? ঐ নোটবুকে ভগবানের কাছে লেখা টুকরো আবেদনও আছে| এই যেমন মা বকলে  বা মারলে‚ এক্দম ডায়রেক্ট ভগবানের কাছে লিখে দেওয়া|‚ "মায়ের সাথে আর কথা বলব না‚ মাকে তুমি কিছু বলবে না ঠাকুর"| কি ছেলেমানুষি তাই না| এক পাতায় লেখা ' ঠাকুর আমার বাপিকে ভালো করে দাও'| মনটা এই জায়গায় এসে আর্দ্র হয় যায়| আমার অবশ্য এখনো মন খারাপ হলে‚ কষ্ট হলে‚ দুঃখ পেলে এই অভ্যেসটা এখনো আছে| ডায়েরির পাতায় লিখে ফেলা| আর সেটা সবটাই ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে| জানি তিনি শোনেন না‚ তবু ঐ মুহুর্তটা আমাকে একটা রিলিফ দেয়|

নোটবুকটার আজ আর তেমন কোন প্রয়োজন নেই| কাকাও নেই‚ হিসাব রাখার দরকারও নেই‚ আমার কাছেও ওর প্রয়োজন ফুরিয়েছে‚ তবু উল্টে পাল্টে দেখে রেখে দি| থাক না‚ এইভাবেই স্মৃতিদের জড়ো করে রাখি  কালকের জন্য| আবার হয়ত কোনদিন নাড়ানাড়ি করতে গিয়ে চোখে পড়বে‚ ঝাপসা হয়ে যাওয়া চোখের দৃষ্টিতে|

undefined says: undefined

টুকটাক মনে পড়ে - পর্ব 13

null says: null

পানের বাটা

আমাদের বাড়িতে কারও তো তেমন পান খাবার শখ ছিল না‚ কিন্তু পানের বাটা একটা ছিল| ওটা ঠাকুমার পানের বাটা| কাই-য়ের ভাগে পড়েছিল| দীর্ঘদিন অব্যবহারে গায়ে ছ্যাতলা পড়ে গেছিল সবুজ রঙের| কাই প্রতিবছর  পুজোর সময় সমস্ত বাসন বের করে মাজামাজি করত| ওটাও ঐভাবে মাজতে মাজতে বেশ অনেকটাই পরিস্কার হয়ে গেছিল|

আমি আমার ঠাকুমাকে দেখিনি| আমার যখন দেড় মাস বয়স‚ আমার ঠাকুমা তখন মারা যান| কিন্তু ঠাকুমার কথা অনেক শুনেছি| শুনতে শুনতে ঠাকুমার একটা অবয়ব মনের মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে| ঠাকুমা ছিলেন জোড়াসাঁকোর জ্যাঠা কাটা দত্তদের বাড়ির মেয়ে| এই দত্ত বাড়িরও ইতিহাস আছে| বড় মানুষের বড় বড় ব্যাপার সে কে না জানে| জ্যাঠাকাটা দত্ত বাড়িও ছিল সেই আমলের প্রভাবশালী‚ বিত্তবান একটি পরিবার| কিন্তু কথায় আছে না‚ বিষয় না বিষ‚ সেই বিষয় সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই ভাইপো নাকি জ্যাঠার কান কেটে নিয়েছিল| সেই থেকেই ঐ বাড়ি প্রসিদ্ধ হয়ে যায় জ্যাঠাকাটা দত্ত বাড়ি হিসাবে| বেনে মহলে এখন ও বাড়ির বেশ নাম| তা যাই হোক এমন বাড়ির মেয়ে আমার ঠাকুমা যে অত্যন্ত আদরের হবেন সে তো বলা বাহুল্য| ঠাকুমা ছিলেন রুচিসম্পন্না| বাড়িতেই বেশ কিছুটা লেখাপড়া শিখেছিলেন| সেই আমলে কি মেয়ে-বউরা লিপস্টিক লাগাতো? জানা নেই‚ জানতে হলে ইতিহাস ঘাঁটতে হবে| তবে ঠাকুমার লিপস্টিকের যে শখ বিস্তর ছিল সেটা মা-কাই এর বক্তব্যে পরিস্কার| সেই সময় নেশা না থাক‚ বাঙালীর ঘরে একটা প্রথা ছিল যে সধবা মানুষ ভাত খেয়ে এক খিলি পান মুখে দেবে| তা পানের বাটায় তো পান থাকতই| আর ঠাকুমার অভ্যাস ছিল কোথাও গেলেই পানের বাটা থেকে পান নিয়ে হামানদিস্তা দিয়ে থেঁতো করে তার রসটা ঠোঁটে লাগিয়ে নিত যাতে ঠোঁট লাল লাগে| দাঁত তো ছিল না‚ রথ দেখা আর কলা বেচা সাথে সাথে হয়ে যেত‚ পানও খাওয়াও হল ঠোঁট রাঙানো-ও হল|  মা কাইয়ের মুখ শুনে শুনে আমারও খুব শখ হত আমিও ঐভাবে ঠোঁট রাঙাবো| কোন কোনদিন মা পান খেলে আমিও একটু প্রসাদের মত পেতাম| আর সেটা চিবিয়ে ঠোঁটের  কাছে নিয়ে আসতাম জাতে আমার ঠোঁটগুলো লাল হয়ে যায়| সবাই হাসত|

তারপর তো ঠাকুমাও চলে যাবার পর পানের বাটাও লুকিয়ে পড়ল  কাঠের আলমারীতে| মাঝে কাকা যাবার অনেক পরে কায়ের খুব শখ হল পান খাবার| আবার বের হল বাটা‚ মেজে ঘষে একটু মানুষের মত দেখতে হল| কদিন খুব পান খাওয়া‚ আমিও খেতাম‚ ঐ ঠোঁট লাল কারা লিপ্সা নিয়েই| তারপর মা খুব বকত্ন জিভ ভার হয়ে যাবে‚ খাবারের স্বাদ পাবি না‚ দাঁত লাল হয়ে যাবে‚ ছোপ পড়ে যাবে ইত্যাদি প্রভৃতি বলে|

পানের বাটার কথা আজ হঠাৎ মনে পড়ল‚ আছে না সেটাও অভাবের তাড়নায় বিক্রি হয়ে গেছে জানি না|

undefined says: undefined

আরো পড়ুন