চার তারিখ‚ মানে এ-ই মাসের চার তারিখে দেখলাম আড্ডাশ্রী ফে বু তে মেসেজ পাঠিয়েছেন - হাই| রিপ্লাই করতে ভাঙলেন ব্যাপারটা: আড্ডা ঘরের জন্মদিন‚ কালকে লেখা চাই|বললাম এত তাড়াতাড়ি কি করে লেখা দেবো দিদি? ত শুনে বললেন‚ কি করবো বলো‚ সবাই ডীচ করে‚ এখন ছাই ফেলতে তুমিই আমার ভাঙ্গা কুলো‚ লক্ষ্মী ভাই আমার!
সে না হয় হলো‚ কিন্তু এত তাড়াহুড়ো করে লিখলে লেখার কোয়ালিটি যে খারাপ হবে! একটু ভাও খেলাম| তা শুনে বললেন‚ কোনো চিন্তা নেই ভাই - নেগেটিভে নেগেটিভে পজিটিভই হবে| তোমার লেখার মান আর বানান - এই দুয়ে মিলে ব্যাপারটা পজিটিভ হতে বাধ্য‚ কিচ্ছু ভেবো না লেখাটা নিয়ে বসে পড়ো|
দু কান কাটা| তাই এসব শুনেও কান গরম হলো না| বল্লাম‚ মাথায় কিছু আসছে না এই মূহুর্তে| দিদি বললেন‚ যা নেই তা নিয়ে আর হা হুতাশ করে কি হবে ভাই‚ তুমি বরং অড্ডাঘরকে নিয়েই কিছু একটা লিখে দিও| আর তাও যদি না পারো তো এবার থেকে না হয় ঝিনুক‚ ঝড় আর জল কে বলে দেবো বানান গুলো না দেখে দিতে|
জোঁকের মুখে কি এই ভাবে নুন ফেলতে হয়??
লেগ পুলিঙ পর্ব সমাপ্ত| অনলাইন বাংলা আড্ডার ঠেক নেহাত কম নেই| আড্ডাঘরের ইতিহাস সকলেরই জানা তবু একটু ফ্লাশব্যাক - বাংলা লাইভের গাঁটামো‚ আমাদের অসম্মানিত বোধ হওয়া‚ ফে বু মজলিশে "সেই" এসেন্স না পাওয়া ও সব শেষে অপন জেঠু-অর্ণবের মাঠে নামা| নেট দুনিয়া তো আমাদের সিমুলেশনেই চালাচ্ছে - ডাঁটা চচ্চড়ি রান্না করেছেন অথচ মা কে খাওয়াতে পারছেন না? চিন্তা কি‚ দিন ওঁনার ওয়ালে পোস্টিয়ে‚ দুধের স্বাদ পিটুলি গোলায় মিটবে অবশ্যই! তাই আড্ডাঘরও যে রিয়েল ঠেকের একটা সিমুলেশনই হবে সে আর আশ্চর্য কি! ধরা যাক একটা ক্লাব - কেউ স্নুকার-টিটি খেলে‚ কেউ 'আরে ভটচাজ ট্যুর থেকে কবে ফিরলে' করে‚ কেউ টিভি দেখে আর কেউ বা শুধুই ড্রিঙ্ক করে বাড়ি চলে যায় কারুর সাথে কথা না বলে|
অড্ডাঘর ও সে রকমই প্রায়| অপন জেঠু ঝোড়োদা মুনিয়াজী মণি মাসি সাহাদা বাবিদা ডালিয়া মাসি শ্রী অর্ণব হিমু মনোজদা সুদীপদা চঞ্চলদা ইরাদি স্তুতিদি অলকাদি শাল্মলী অমি ভোঁদড়দা সুশান্ত ইত্যাদিরা মূলত আসেন আড্ডা মারতে| আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে একটু আধটু সাহিত্যের হাত মকসো ও চলে| শিবাংশু দার ধারাটা আবার ঠিক উল্টো - সাহিত্য করার ফাঁকে ফাঁকে একটু আড্ডা মেরে নেন| তস্য তাত সোমেনদা আসেন মূলত লেখালিখি করতেই| ঝিনুকদি আর জল আবার পুরো ব্রিটানিয়া ফিফটি-ফিফটি! আড্ডা আর সাহিত্যের সমান মিশ্রণ| অরিন্দমদার আড্ডাটাই সাহিত্য| না না‚ কবিতা| আর কবিতাই আড্ডা! আরো অনেকেই আসেন‚ কারুর সাথে হয়ত কথা বলেন না‚ কিন্তু লোকের লেখার রসাস্বাদন করেই এঁদের তৃপ্তি| বারে বসে চুপচাপ দুটো পেগ সময় নিয়ে শেষ করে বাড়ি চলে যান - আমরা কেউ তাঁদের খবর রাখি না| আর আছেন শঙ্খদ্বয়| এরা অনেকটা পাড়ার সেই ছেলেগুলোর মতন যারা ঠেকের রেগুলার attendee নয়‚ কিন্তু ওই ন মাসে ছ মাসে - কিবে‚ ভালো আছিস তো - বলে আবার বারো মাস পরে আসে| ঋত্ত্বিক কেও একই ক্যাটাগরিতে ফেলা চলে প্রায়| তৃপতিদিও একটু অনিয়মিত নানান ঝামেলায়‚ কিন্তু মাঝে মাঝে এসে খবর নিয়ে যায় ঠিকই| নিনা কাকিমার ও আজকাল দেখি একই ধারা| শারদীয়াতে লেখা দেওয়ার পর সুচেদি এসেছিলো কি? মনে পড়ছে না! ক্লাব আছে‚ বার আছে আর মাতাল থাকবে না তা কি হয়? ঠিক ধরেছেন - কুকুরদা| শালা বরোদা থেকে উজিয়ে আসে ঝামেলা করতে|
ছোটোবেলায় দেখেছি পাড়ার কাকুরা হঠাৎই একটা ফাঁকা জায়গায় একদিন বেঞ্চ পেতে বসে আড্ডা শুরু করলো| তার পর থেকে ওই জায়গাটা ওই কাকুদেরই| আসেপাশে কিছু নেই‚ শুধু একটা বেঞ্চ আর কিছু তরুন - দৃশ্যটা কেমন যেন নেড়া নেড়া| আড্ডাঘরের শুরুর দিকতাই ভাবা যাক| এই সব ব্লগ ট্ল্গ রেসিপি ইত্যাদি কিছুই ছিলোনা - শুধু ওই একটা ম্যাড়ম্যাড়ে ব্যানার| ম্যাগো! কে আসে এখানে! তাই আসতাম ও না| তারপর তো শারদীয়ার জন্য হুকুম হলো - লেখা দাও (আবারো আড্ডা শ্রী)| তা লেখা জমা দিতে এসে দেখি ব্যাপরটা আর অত নেড়া নেড়া নেই| বেঞ্চটার মাথায় শামিয়ানা লেগে গেছে| কার বাড়ির থেকে লাইন টেনে একতা বাল্ব ও জ্বালানো হয়েছে| আর আসে পাশে ঘুঘনি ঝালমুড়ির দোকানও দিয়েছে দেখলাম দু একটা| মনে হলো‚ এখানে মাঝে মাঝে আসাই যায়|
পাড়ার ঠেকেও এমনটাই হয় কিন্তু| ঠেকটা যেদিন তমাল কাকু বেঞ্চ এনে শুরু করেছিলো‚ তখন বুকুদা ওখানে আসতো না| তমাল কাকুকে ওর পোশায় না| বুকুদা বলে‚ ওরকম গাম্বাটের সাথে বন্ধুত্ব হয় না| তাই বুকুদা ওই রাস্তা দিয়েই পাশের পাড়ায় আড্ডা মারতে যেত সন্যালদের রকে| সান্যালদের রকটা জমজমাট! খুব হাই লেভেলের আড্ডা হয়| লোকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও আড্ডা দেয় ওখানে|
একদিন ওই রকমই এক সন্ধ্যবেলা বুকুদা যাচ্ছে সন্যালদের রকে‚ তমাল কাকু ডাকলো - বুকু শুনে যা|
-কেন?
-আরে আয়না একবার!
-বল|
-বোস‚ কথা আছে|
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ব্ঞ্চটায় বসে বুকুদা| তমালের আনা বেঞ্চে পাছা ঠেকেতে ইচ্ছে করে না|
-বুকু‚ এবার সরস্বতী পুজো করবো| প্যান্ডেলটার ডেকরেশনটা একটু দেখে দিস| বেশি কিছু না‚ ব্যাকগ্রাউন্ডে থার্মোকল দিয়ে যা হোক একটা কিছু করে দিস! তুই ছাড়া হবে না!
-দেখছি|
বুকুদা চলে যায়| সন্যালদের রকের দিকে যেতে যেতে তমাল কাকুর কথাটা ওর কানে বাজে - তুই ছাড়া হবে না!
পুজোর দু- দিন আগে পাশের পাড়ায় আড্ডা মারতে যাওয়ার আগে ডিজাইনটা নিয়ে বুকুদা যায় বেঞ্চটার কাছে| কিন্তু বেঞ্চ কোথায়? এ তো পুরো দস্তুর ক্লাব ঘর বানিয়ে ফেলেছে প্রায়| দড়মার বেড়া দিয়ে ঘিরেছে খানিকটা জায়গা| মাথায় একটা টিনের ছাউনি| রবিদাদের বাড়ি থেকে লাইন টেনে আলোর ব্যবস্থা করেছে| ক্যারম বোর্ডে চার জন| বাকি চার জন তাস পেটাচ্ছে| আর কিছু ছেলের সাথে তমাল বসে গুলতানি মারছে|
-দেখ এটা চলবে কি না|
-আরে তুই করেছিস চলবে না মানে! দৌড়বে| ও দেখার কিছু নেই| আয় বোস|
-তাড়া আছে| কাল রাতে এসে প্যান্ডেলটা বানিয়ে দিয়ে যাবো| চারটে পাঁচ ফুটের তিন জ পিভিসি পাইপ আনিয়ে রাখিস| আর দুজন হেল্পিঙ হ্যান্ড লাগবে|
- আরে দুজন কিরে! আমরা সবাই থাকবো! একটু বসবি না?
-না রে| তাড়া আছে|
সান্যালদের রকে এসেও বুকুদার কানে বাজতে থাকে - আরে তুই করেছিস চলবে না মানে! দৌড়বে|
তারপর আস্তে আস্তে যে যার জীবন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লো| তমাল কাকু রোজই এসে ক্লাবের তালা খুলে বসতো‚ কিন্তু সকলে সব দিন আসতে পারতো না| টুকুদা বিয়ে করলো| আশিষ কাকু বাইরে কোথায় একটা চাকরি পেয়ে চলে গেল| বাকি যারা কলকাতাতেই রইল‚ তারাও অফিস সামলে রোজ আসতে পারতো না| এলেও মিনিট পনেরো গল্প করে চলে যেত হয়ত| ক্লাবটা ফাঁকাই পড়ে থাকতে লাগলো বেশির ভাগ সময়| বুকুদা রোজই একবার করে আসতো সান্যালদের রকে যাওয়ার পথে‚ কিন্তু ওই টুকুই|
তারপর একদিন তমাল কাকুও পুনেতে চাকরি পেয়ে চলে যায়| পরের ব্যাচের ছেলেরা আসতে শুরু করলো ক্লাবে| ক্লাব ভরলো| আবার খালিও হলো| তারপর একদিন ক্লাবটাই উঠে গেল| ক্লাবের জমিতে এখন বাক্স বাড়ি|
সান্যালদের রকটাও আর নেই| রকে আড্ডার বিষয় বস্তু ক্রমে তরল হচ্ছিলো| গভীর রাতে কেউ কেউ তরল নিয়ে আসর বসাচ্ছিলো রকে| সান্যালরা তিতি বিরক্ত হয়ে রক তুলে দেয়|
সেদিন অর্ণব বলছিলো লেখা কম আসছে|
অনেকে হয়ত আসছেন‚ কিন্তু পড়তে| সবাই লিখলে পড়বে কে? ওই যে বললাম - কেউ চুপচাপ ড্রিঙ্ক করে বাড়ি চলে যান‚ কেউ বা জমিয়ে আড্ডা মারেন| জোর করে তো আর আড্ডা হয় না! সরস্বতী পুজোর পর থেকে সান্যালদের রকে যাওয়ার পথে বুকুদা রোজ একবার করে ক্লাবে আসতো| কিন্তু ওই টুকুই|