শিবাংশু
ঠেক, এক বছরে
তা হলে এক বছর হয়েই গেলো। বাংলা আড্ডার ক্যালেন্ডারে পাতা বদল। মজলিশ থেকে বাংলা আড্ডায় কায়াপলট। কাঁঠালকাঠের চৌকি বদলে হয়েছে খাট/ কুঁড়ে ঘরের দরজা সরে জোড়া কপাট....
---------------------------------------
একটা সময় ছিলো, যখন আমরা আমাদের শ্রেষ্ঠ আড্ডাগুলি দিতুম মাঠে ময়দানে, রকে গলির মোড়ে। সঙ্গে যদি কিছু চা তেলেভাজার সঙ্গত থাকতো তবে তো স্বর্গসুখ। এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নিকৃষ্ট সব প্রসঙ্গ মুখরিত তুমুল উচ্চকিত আড্ডা থেকে আমরা যেভাবে বেঁচে থাকার অনন্ত রসদ সংগ্রহ করেছি তার কোনও বিকল্প কখনও পাইনি। সেই সব আড্ডাধারীরা কখন আমাদের ব্যক্তিঅস্তিত্বের অংশ হয়ে গেছে তার কোনও পোষাকি খতিয়ান কোথাও লিখে রাখতে হয়নি। সেই সব আড্ডার বিষয়বস্তু হিসেবে জগৎ সংসারের যাবতীয় প্রসঙ্গই আসতো, কোনও ভেদরেখাবিহীন সামূহিক মনোকর্ষণ। সমস্ত আড্ডাধারীরাই তাদের ধারণা, যুক্তিবোধ, কল্পনা ও সৃষ্টিশীলতার যেসব শ্রেষ্ঠ প্রকাশ, তাকে উজাড় করে দেওয়ার প্রয়াস করতো। বিষয়গুলি ব্যক্তি থেকে শুরু হয়ে সমষ্টির অনন্ত সম্ভাবনায় পৌঁছে যেতো। যেমন জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের মধুবংশীর গলি বা বিষ্ণু দের অন্বিষ্ট। আমাদের আড্ডা ছিলো সেরকম।
------------------------------------
আজ আমরা আড্ডা দিই পরস্পরের ড্রইংরুমে বসে। একজন গৃহকর্তা ও তাঁর অভ্যাগতরা আড্ডা দেবার চেষ্টা করি হয়তো, কিন্তু আলোচনাগুলি হয় ছাড়া ছাড়া, পারম্পর্যবিহীন, নিরুৎসাহ, অগভীর। গৃহকর্তার পরিবেশিত সুখাদ্যের ঘ্রাণ বা ভাগ্য ভালো হলে সিঙ্গল মল্টও আমাদের মাঠ ময়দানের আড্ডার প্রখর নিবিড়তাকে ফিরিয়ে আনতে পারেনা। সেইসব আসরেও ফেসবুক টুইটারের কালো ছায়া ডানা মেলে নেমে আসে। সবাই এখন স্মার্ট ওয়ান লাইনারের ভক্ত ও ভৃত্য। নিজের হৃদয়ের কাছে যাবার শ্রম স্বীকার করতে প্রস্তুত নই। একমাত্র ভাবনা কীভাবে নিজের একটা 'স্মার্ট' ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়। কীভাবে বেচা যায় নিজেকে। আমাদের মতো এলেবেলে ঢিলেঢালা লোকেরা, যারা কিছু পেতে বা কিছু দিতে আড্ডায় আসে তারা অনিঃশেষ ধন্দে পড়ে নীরবতা স্বর্ণিম শান্তিকল্যাণের আশ্রয় নেয়।
তবু 'আড্ডা' দিই, কারণ তা আমাদের ভবিতব্য। তাই বছর ঘোরে অলীক পাতার আশ্রয়ে।
-----------------------------------
আমি যখন প্রথম বাংলা আড্ডায় আসি তখন মূল পাতা ছিলো আমাদের মাঠময়দান রকরাস্তার আড্ডা। এখনও তাই আছে। তারপর ড্রইংরুমের সীমাবদ্ধ আকাশে একের পর এক তারা ফুটিয়েছেন গৃহকর্তারা। তাঁদের বহু পরিশ্রম করে এনে দেওয়া আয়োজন ব্যপ্তির সীমা এগিয়ে দিয়েছে বহুদূর। বহু আগ্রহীজন এখন ইচ্ছেমতো সেই সিঙ্গল মল্টের আসর পর্যন্ত পৌঁছে যান, বিনা আয়াসে। শারদীয় বা নববর্ষের বিশেষ সংখ্যা তো সত্যিই 'বিশেষ' হয়ে উঠেছে। নিজেকে বদলে নেওয়া, নতুন ভাবে ফিরে পাবার আকাঙ্খা, আজ আমরা এই পাতায় খুঁজে পাচ্ছি। কারণ যেকোনও পরিবর্তনই স্বাগত। বেদান্তে সেটাই ব্রহ্ম এবং দাস ক্যাপিটালে তা 'সত্য'।
--------------------------------
সালতামামি করতে গিয়ে দেখছি গত এক বছর ধরে যাঁরা সেই সব আলোচনায় (পড়ুন আড্ডায়) এসেছেন, তাঁরা নিজের কথা পেশ করার আগে যথেষ্ট মনোসংযোগ করেছেন। নিজের প্রকাশভঙ্গির শ্রেষ্ঠ শৈলিটি উপহার দেবার প্রয়াস করেছেন। এভাবেই তো একের কথা অনেকের হয়ে ওঠে। যাঁরা 'নীপা' তাঁরাও উপভোগ করেন পুরো মাত্রায়। দায়হীন উড়ো মন্তব্যের চাপ এখন অনেক কম। অগভীর, নিরাসক্ত, পল্লবগ্রাহী চর্চা থেকে দূরে থাকার সচেতন উদ্যম স্পষ্ট হয়েছে এই এক বছরে। -----------------------------------
নানা কারণে ব্যক্তি আমার কিছু দ্বিধা ছিলো প্রথম পর্বে। কিন্তু পরিচালকদের নিষ্ঠা ও শ্রমের যে উদাহরণ দেখলুম গত বারোমাসে, তাকে দাদ দিতেই হয়। হয়তো তাঁরা মাঝে মধ্যে একটু নিরাশ হয়ে পড়েন। ভাবেন 'আড্ডা'ধারীদের উৎসাহ তাঁদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না। কিন্তু ব্যাপারটা সম্পূর্ণ সত্য নয়। এখানে নিয়মিত আগন্তুকদের মধ্যে সাবেকি মজলিশের দৌলতে যে পরস্পর ব্যক্তিক সম্পর্কসূত্র তৈরি হয়েছিলো, তাতে আরো শান চড়েছে। অন্য সব পাতাগুলির সঙ্গে তুলনায় এখানে নৈর্ব্যক্তিকতার সাহেবিয়ানাকে বেশ এড়িয়ে চলা হয়। এটা এই পাতার একটা প্রধান আকর্ষণ। 'আড্ডা' এবং সেমিনারমার্কা মগজ ব্যায়াম, দুই ভিন্ন মেরুর রসদে কখনও খামতি পড়েনা। আড্ডায় মানুষ তার যাবতীয় বোকামি, কান্ডজ্ঞান, রসবোধ, সুখদুঃখের পশরা নিয়ে সমমনা, সহমর্মী বন্ধুদের সঙ্গে নিজেকে বিনিময় করে। এর মূল্য কিছু কম নয়। আমার বিশ্বাস পরিচালকদের 'স্বপ্নে'র লক্ষ্যমাত্রা নিশ্চয় পূর্ণ হবে। কিন্তু সন্ত কবিরকে কী করে ভুলি। " ধীরে ধীরে রে মনওয়া, ধীরে সব কুছ হোয়/ মালি সিঁচে সও ঘড়া, রিত আওয়ে ফল হোয়।"
-----------------------
পরিশেষে এটাও লিখে রাখি। যদিও বেশ কিছু সৃজনশীল সুহৃদের নিরন্তর যোগদানে এই পাতাটির শ্রী ও সৌষ্ঠব ক্রমশঃ উন্নত হয়েছে, কিন্তু যে দুজন এই উদ্যমটিকে সফলতার সিঁড়ির দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন, তাঁদের নিরলস শ্রম ও নিষ্ঠার উল্লেখ করাটা আমার মনে হয় অবশ্য কৃত্য। অরিন্দম রায় এবং শ্রী'কে এই অবসরে অভিনন্দন জানাই। তাঁদের সাময়িক সাঁঝস্বভাবের দ্বিধা দূর হোক। সবাইকে নিয়ে বাংলা-আড্ডা আগামী বার্ষিক গতির কক্ষপথকে অতিক্রম করুক, সেই শুভেচ্ছা রেখে গেলাম।

ঝিনুক
শুভ জন্মদিন
এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাব.....
দেখতে দেখতে এক বছর পেরিয়ে গেল.... গোটা একটা বছর, "এক দো তিন, চার পাঁচ ছে সাত আট নও, দশ গেয়ারা" গিন গিন করে পাক্কা বারোটা মাস, তিনশো পঁয়ষট্টি দিন.....
আমাকে পড়লে মনে খুঁজো এইখানে
এখানে খুঁজছি আমি জীবনের মানে....
শুভ জন্মদিন আড্ডা। শতায়ু ভব। সুন্দর থেকে সুন্দরতর হও, দিনে দিনে আরো সমৃদ্ধ হয়ে ওঠো। পথ দেখাক স্বর্ণালি আগামী। এই দিন আর তুমি ফিরে ফিরে এসো বার বার জীবনে আমাদের। অনেক সোহাগ আর বৃষ্টিভেজা টাটকা জুঁইয়ের জোড়াসুতোর মালা জন্মদিনের উপহারে তোমার জন্য।
সেই ওয়ান নট সো ফাইন মর্নিঙে ঘুম ভেঙে দেখি মজলিশ আবার আগাপাশতলা খোলনলচে বদলে ফেলেছে। বলা নেই, কওয়া নেই, কারও মতামতের, সুবিধা অসুবিধার তোয়াক্কা না করেই নিতি নিতি ভোল পাল্টানো মজলিশের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এই শেষের চমকটা একটু বেশিরকমের বাড়াবাড়ি বলেই প্রমাণ হল। লিখতে গিয়ে নাজেহাল, পুরনো লেখাপত্র সব গায়েব, সব সহ্যেরই বোধ হয় একটা সীমা থাকে। সেই সীমা সেদিন টুটে গিয়েছিল। তাতে অবশ্য কর্তৃপক্ষের কিছু এসে যায় না কস্মিনকালেও, এক্ষেত্রেও তার কোন অন্যথা হয় নি। কিন্তু মজলিশ ছত্রখান হয়ে গেল। মজলিশে শেষ পোস্টটা করে বেরিয়ে এসে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
কেমন একটা নেশার মত হয়ে গিয়েছিল সেই খোলা আড্ডাটা, কখন যেন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছিল মজলিশের বৈঠকখানাটা। তাই মন খারাপ হওয়া তো অস্বাভাবিক কিছু নয়। ঋত্বিকের প্রচেষ্টায় আস্তে আস্তে মজলিশ মুখবইতে ট্র্যান্সফার হয়ে গেল। অনেক নামী দামী লেখকদের ভালো ভালো লেখা পড়ার সুযোগ হল নিয়মিত, মজলিশে যারা কোনদিন লিখতেন না। সবই হলো, কিন্তু ঐ ইংরেজি হরফে বাংলা পড়ে আর প্রত্যেকবার কপি পেস্ট করে বাংলা লিখে আড্ডা ঠিক তেমনটি যেন আর জমলো না। এমন একটা দোলাচলের সকালে বাংলা আড্ডা জন্মালো। এসে দেখি বেশ কয়েকজন চেনা বন্ধু নাম লিখিয়ে গেছেন। আর দিব্যি বাংলাতেই লিখে আড্ডা দেওয়া যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমার চাটাইখানা নিয়ে উঠোনের এককোনায় লেপে পুঁছে পেতে বসে গেলাম। সত্যি কথাই বলি, খুব ভালো লেগেছিল আমার সেই প্রথম দিনেই। আজকের মত এত খেলনা, এত রংবাহারী সাজপোষাক সেদিনের আড্ডার ছিল না। তবু মনে হয়েছিলো, বাহ, বেশ নির্ভাবনায় বাংলায় আড্ডা দেবার তাহলে একটা পাকাপাকি জায়গা হল। অনেক ফিসফাস, কানাকানি, কে, কি, কেন, অনেক সাবধাববাণী শাখায় প্রশাখায়, পাতার আড়ালে সেদিন। ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে সেই গুঞ্জন স্তিমিত হয়ে গেছে, বাকি বন্ধুরাও বেশির ভাগই এসে যোগ দিয়েছেন। জমে উঠেছে আমাদের আড্ডা।
আমার বর্তমান অফিসটা এয়ারপোর্ট চত্বরে। এগারোতলার ওপর থেকে অনেক দূর অবধি অবারিত দৃষ্টি। সারাদিন অগুন্তি প্লেন উঠছে, নামছে। এই যেমন এই লেখা টাইপ করতে করতে দেখছি, একটা প্লেন হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে এসে দাঁড়ালো রানওয়ের মুখটাতে। একটু পরেই দৌড় শুরু করল, দ্রুত থেকে দ্রুততর হতে হতে বাতাসে ভেসে উঠে গেল আকাশে কি অবলীলায়। কি আশ্চর্য সমাপতন! আমিও তো এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়া আড্ডার গল্পই লিখতে বসেছি--- শুরুর সেই সেদিনে একা অর্ণব ছিল, শ্রী তখনও বেশ কয়েক দিন দূরে। যার যা কিছু অসুবিধা, আবদার, প্রস্তাবনা, সব একলা অর্ণব শুনেছে, উত্তর দিয়েছে, প্রতিবিধান করেছে। একটা সাইট খাড়া করে সেটাকে বেয়ে নিয়ে যাওয়া, প্রত্যেকদিন তার রক্ষণাবেক্ষণ, প্রয়োজনে কলকব্জা মেরামতি একেবারে কিছু নাড়ুগোপালের হাতের মোয়াটি নয়। তার পেছনে প্রচুর পরিশ্রম, সময়, মনোযোগ সব দিতে হয়েছে। সখের বিপ্লব, লেনিন, মার্ক্স, ব্রিজখেলা, বিগ বস, সব শিকেয় তুলে রেখে দিনরাত এক করে খেটেছে ছেলেটা। অনেকবার ভেবেছি, ওকে অন্তত একটা থ্যাঙ্ক ইউ বলি, কিন্তু সেভাবে কোনদিন ধন্যবাদটুকু আর জানানো হয় নি।
আড্ডার পানসিটি বয়ে চললো তরতর করে সময়ের উজানে। যেদিন পাতার সংখ্যা প্রথম একশো ছাড়ালো, হাততালি দিয়েছিলাম আমরা কয়েকজন মিলে। তারপর আরো অনেকগুলো একশো পেরিয়ে গেছে, আড্ডা আজ হাজারের দুয়ারে। এইভাবে আরো অনেক হাজার পেরিয়ে যাক। একে একে ভরে উঠেছে দর্শকের আসন, দীর্ঘ হয়েছে সদস্যের তালিকা, আরো দীর্ঘ হবে আগামীতে। কোন এক শুভলগ্নে শ্রী এসে যোগ দিল আড্ডায়। তারপর একটু একটু করে শারদীয়া থেকে শুরু করে আজ অবধি, ওর আড্ডাখেলা দেখলে আমার বাচ্চাদের পুতুলখেলার কথা মনে পড়ে। নিত্য নতুন জামাটা, চুড়িটা, চুলের ফিতে, কপালের টিপ, পুতুলমেয়েকে আরো সুন্দর করে সাজানোর জন্য। শ্রীরও তেমনি। সারাক্ষণ ওর আড্ডা পুতুলরাণীকে নিয়ে ভাবনায় মশগুল। কি ভাবে সাজালে আরো ভালো হয়, আরো আকর্ষণীয় হয়, কি করে পার্টিসিপেশন বাড়ানো যায় সবার, সর্বক্ষণ সেই ব্রেইনস্টর্মিং চলছে। আর খাটতেও কিছু পারে এই দু'জন, অর্ণব আর শ্রী। যেমন ধৈর্য, তেমনি অধ্যবসায়.... হ্যাটস অফ ট্যু ইউ বোথ। মাঝে মাঝে ভাবি, ভাগ্যিস আমার হাতে নেই আড্ডার কারিগরি হালখানা। কি যে হত তাহলে? ইচ্ছে হল তো এসে পাতাকে পাতা ভাটিয়ে গেলাম, আর যেদিন মনের আকাশ জুড়ে কালবৈশাখী মেঘবৃষ্টি, সেদিন বালিশে মুখ গুঁজে কাটিয়ে দিলাম। পনেরো দিন, একমাস পরে এলেও জানি আড্ডা ঠিকঠাক একভাবেই থাকবে অবারিত দ্বার আমার জন্য। আজ আড্ডার প্রথম জন্মদিনে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে গেলাম তাই দু'জনকেই। সেই সঙ্গে অপনকাকুকেও। আর সবচেয়ে বড় চিয়ার্সটা আমাদের জন্য, আমাদের সুখদুঃখ, হাসিতামাসা, মান-অভিমান, "কেন রে বেটা ইস্টুপিড"--হুলিয়ে ঝগড়াঝাঁটি, একে অপরের ঠ্যাং ধরে টানাটানি---- হিপ হিপ হুররে-এ-এ-এ-এ-এ......
সংস্কৃতির ঢাক তেরে কেটে তাক তাক দমা দম দমা দম কৃষ্টি বিষম-
আমাদের জন্য, সব আমাদের জন্য.....

জল
আজি জন্মদিনে
আজ থেকে ঠিক একটি বছর আগে আজকের দিনে আঁতুরঘরে চোখ মেলেছিল আমাদের এই একান্ত আপন আড্ডাঘর| দৃষ্টি তখন ঝাপসা‚ গায়ে তখনও লেগে আছে পেঁজা তুলোর মত কুয়াশা| যে কুয়াশায় আশা-নিরাশার স্পষ্ট ছাপ| গুটিকয় হাতে গোনা লোক তার আবির্ভাবে খুশী হয়েছিল| এসেছিলো এই পাতায় নির্দ্বিধায়| আগোছালো‚ অবিন্যস্ত পাতা একটু একটু করে নিজেকে গুছোতে শুরু করল ঐ সব মানুষদের সাথে নিয়ে| অনুভবে বুঝিয়ে দিল‚ এ তোমারও পাতা| তোমার মতামতকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে| তোমার অসুবিধে-সুবিধে সবই দেখবে এই পাতা| বুঝিয়ে দিল তোমাদের ছাড়া এই পাতা একটি পদক্ষেপও ফেলতে পারবে না| তোমরাই তার সম্পদ|
কে বানালো এই পাতা? কেন বানালো? কি দরকার ছিল তার ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবার?
আমরা তখন বিক্ষুব্ধ জনগণ| বালার নিরন্তর পরিবর্তনে বিরক্ত‚ হতাশাগ্রস্থ| আবেদন-নিবেদনেও কর্ণপাত যখন করলেন না বালার কর্তৃপক্ষ তখন আমাদের শ্রদ্ধেয় অপনকাকু প্রস্তাব আনলেন এমন একটা পাতা কি গড়ে তোলা যায় না‚ যেখানে আমরা সবাই প্রাণখুলে আড্ডা দিতে পারি‚ যেখানে আমাদের এমন কোন কতৃপক্ষ থাকবে না যে আমাদের কথায় কর্ণপাত করবে না| বালার পাতায় আই টি গাই-এর অভাব ছিল না| অনেকেই তো ছিলেন‚ নিতে পারতেন প্রাথমিক প্রচেষ্টা| কিন্তু কেই বা চায় নিজের অমূল্য সময় আর মেধা নষ্ট করতে? কিন্তু কেউ কেউ সত্যি চায়| আর যে চায় সে নিঃসন্দেহে অভাব অনুভব করে বাংলায় লেখার‚ পড়ার‚ ঝগড়া করার মত একটা প্ল্যাটফর্মের| আর সেই অভাববোধ থেকেই জন্ম হয়ত এই পাতার|
কিন্তু আমার মনে হয় এই যে বেরিয়ে গিয়ে একটা আলাদা অস্তিত্ব তৈরী করার জেহাদটা প্রথম দেখিয়েছিল ঋত্বিক| খুলে দিয়েছিল ফেসবুক মজলিশ| আমন্ত্রণ করে এনেছিল সেইসব মজলিশীদের যাদের জন্য একটা সময় বালার পাতা জ্বলজ্বল করত| কিন্তু তা সত্বেও আমরা অনেকেই অনুভব করেছিলাম যে ঋত্বিকের বানানো ফেসবুক মজলিশে লেখা দেওয়া‚ লেখা পড়ার যেমনই সুযোগ থাকুক না কেন‚ তা কখনই বালার সমকক্ষ অনুভুতির জন্ম দিত পারে না| অনেকটা ঐ সকালে চা খেতে খেতে খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে নেবার মত অনুভুতি‚ যেটা সারাদিন নিউজ চ্যানেল খুলে বসে থাকলেও হয় না| তাই আপনকাকু ডাক দিতে চলে এসেছিলাম এই পাতায় অন্য কয়েকজনের মত|
নতুন এ পাতায় তখন চুলচেরা বিশ্লেষন চলছে কে এই পাতা বানালো? তার কি উদ্দ্যেশ্য ইত্যাদি| চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে ফেসবুকের পাতাতেও| মেঘনাদের মত কেন সে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে? কেই বা স্পনসর করছে এই পাতাকে? শুধু শুধু আড্ডা দেবার জন্য এই পাতার সৃষ্টি নাকি কোন ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্য আছে ? আমিও কি এইসব ভাবছিলাম না? হয়ত ভাবছিলাম হয়ত নয়| আমি তো বরাবরই উচ্চকিত ছিলাম না সে ঐ পাতাতেই হোক বা এই পাতাতেই| নিজের সীমাবদ্ধতা আমি জানি| টুকটাক লেখা দেওয়া ‚ ব্যস মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত|
প্রথম থেকেই যে জিনিসটা ভালো লেগেছিল তা হল এই আড্ডাপাতার অ্যাডমিনের ব্যবহার যা আন্তরিকও যেমন তেমনই ভদ্র| প্রত্যেককে সমান গুরুত্ব দেওয়াটা খুব ভালো লেগেছিল| সেই প্রথম আমার নিজেকেও মনে হল আমিও একজন সদস্য| আমারও মতামতের গুরুত্ব আছে‚ যা এতদিন পর্যন্ত বালার পাতায় আমার মনে হয়নি| কারণ হয়ত ঐ পাতাটা আমাদের হয়েও আমাদের ছিল না‚ আর এই পাতাটা জন্ম লগ্ন থেকেই আমাদের এই অনুভুতি কাজ করছিল|
ধীরে ধীরে প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে এই পাতা একটু একটু করে নিজেকে মেলতে শুরু করল| আসতে শুরু করল আরও অনেকে| আর এই নিয়ে আসার পিছনে আমাদের সদস্যা শ্রী ম্যাডামের অবদান অনেকখানি| এই পাতার অ্যাডমিন ভেবেছিলেন তার তৈরী এই পাতায় আসতে অনেকেই আগ্রহ দেখাবে না| হ্য়ত ভুল ভাবেন নি| আমরা যারা এই পাতার গুটিকতক সদস্য তারাও তখন নিরন্তর ভাবছি‚ লোক না এলে বাড়ি জমজমাট হবে কি করে| শুধু তুমি আর আমি এই নিয়ে তো আর চলে না| শ্রী এল আর শ্রী সঙ্গে নিয়ে এল| পাতার সদস্য সংখ্যা বাড়ল| পাতাও নিজেকে রোজ উন্নত করতে শুরু করল| অাডমিন প্রথম দিন থেকেই এই পাতাকে উন্নত করার যে প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন সেটায় যেন বান এসে গেল|
এবার বুঝি প্রকাশ করার পালা| প্রকাশিত হলেন এতদিনের অ্যাডমিন| আর তার প্রকাশে অনেকই বিস্মিত হলেন আবার কেউ কেউ হলেন আপ্লুত‚ মিলে গেছে তার চিন্তাধারা কে এই অ্যাড্মিন| তিনি আর কেউ নন আদি আর অকৃত্রিম অর্নব ওরফে অরিন্দম রায়| এই অর্নব আমাদের চেনা অর্নব নয়| আইভিদি একবার বলেছিলেন লেখা পড়ে একটা মানুষকে যতটা বোঝা যায় ততটা আর কোন কিছু দিয়েই বোঝা যায় না| কিন্তু এক্ষেত্রে বুঝি সেটা মোটেই খাটে না| অর্নব নাকি অরিন্দম বলব‚ অরিন্দমই বলি| তার সাথে প্রথম পরিচয় আমার ছেঁড়া কিছু স্মৃতির পাতা থেকে ব্লগে| প্রথম আলাপে বেশ নরম সরম মনে হলেও মজলিশের পাতায় লেখা দেখে বেশ রুঢ় মনে হয়েছিল| কারও সাথেই যেন বনে না| এমনিতে মজলিশের মূল পাতায় আমি পড়া বাদে লেখা দেবার কথা ভাবতামই না| ওখানে কত তাবড় তাবড় লেখক লেখেন‚ আমার লেখা সেখানে পাত্তাও পাবে না| সেসব পুরোনো কাসুন্দি অনেকেই জানেন| কিন্তু আমার অবাক লেগেছিল যে লোকটা আমাকে মূল পাতায় লেখা দিতে উৎসাহিত করে‚ সেই লোকটাই এমন সূঁচ ফুটিয়ে দেওয়া লেখা লেখে কেন?
এপাতায় সেই অরিন্দম একদম বদলে গেল| অনেক বেশি প্রগলভ মনে হল| কোথায় গেল সেইসব সূঁচ ফোটানো লেখা? বরং অনেক বেশি সহনশীল‚ খোঁচা দিলেও রাগে না| এ পাতায় কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে যখন তর্ক বিতর্ক চলছে তখন তার লেখানী সংযত| যা অনেকের প্রশংসাই কুড়িয়েছে| অরিন্দম কি নিজে বদলে গেল? এ প্রশ্নের উত্তর একমাত্র তিনিই দিতে পারেন|
সে যাই হোক আমি সমালোচক নই‚ একজন এ পাতার সদস্যা| আমি চাইব এ পাতা দিনে দিনে আরও সমৃদ্ধ হোক| অরিন্দম আর শ্রী এদের সমস্ত উদ্যোগ সাফল্যমডিত হোক| জন্মদিনে এই হল আমার চাওয়া| ভালো থাকুক অরিন্দমের মানসপুত্র‚আমাদের পাতা আড্ডাঘর|

Kaushik
আড্ডার একাল ও সেকাল
চার তারিখ‚ মানে এ-ই মাসের চার তারিখে দেখলাম আড্ডাশ্রী ফে বু তে মেসেজ পাঠিয়েছেন - হাই| রিপ্লাই করতে ভাঙলেন ব্যাপারটা: আড্ডা ঘরের জন্মদিন‚ কালকে লেখা চাই|বললাম এত তাড়াতাড়ি কি করে লেখা দেবো দিদি? ত শুনে বললেন‚ কি করবো বলো‚ সবাই ডীচ করে‚ এখন ছাই ফেলতে তুমিই আমার ভাঙ্গা কুলো‚ লক্ষ্মী ভাই আমার!
সে না হয় হলো‚ কিন্তু এত তাড়াহুড়ো করে লিখলে লেখার কোয়ালিটি যে খারাপ হবে! একটু ভাও খেলাম| তা শুনে বললেন‚ কোনো চিন্তা নেই ভাই - নেগেটিভে নেগেটিভে পজিটিভই হবে| তোমার লেখার মান আর বানান - এই দুয়ে মিলে ব্যাপারটা পজিটিভ হতে বাধ্য‚ কিচ্ছু ভেবো না লেখাটা নিয়ে বসে পড়ো|
দু কান কাটা| তাই এসব শুনেও কান গরম হলো না| বল্লাম‚ মাথায় কিছু আসছে না এই মূহুর্তে| দিদি বললেন‚ যা নেই তা নিয়ে আর হা হুতাশ করে কি হবে ভাই‚ তুমি বরং অড্ডাঘরকে নিয়েই কিছু একটা লিখে দিও| আর তাও যদি না পারো তো এবার থেকে না হয় ঝিনুক‚ ঝড় আর জল কে বলে দেবো বানান গুলো না দেখে দিতে|
জোঁকের মুখে কি এই ভাবে নুন ফেলতে হয়??
লেগ পুলিঙ পর্ব সমাপ্ত| অনলাইন বাংলা আড্ডার ঠেক নেহাত কম নেই| আড্ডাঘরের ইতিহাস সকলেরই জানা তবু একটু ফ্লাশব্যাক - বাংলা লাইভের গাঁটামো‚ আমাদের অসম্মানিত বোধ হওয়া‚ ফে বু মজলিশে "সেই" এসেন্স না পাওয়া ও সব শেষে অপন জেঠু-অর্ণবের মাঠে নামা| নেট দুনিয়া তো আমাদের সিমুলেশনেই চালাচ্ছে - ডাঁটা চচ্চড়ি রান্না করেছেন অথচ মা কে খাওয়াতে পারছেন না? চিন্তা কি‚ দিন ওঁনার ওয়ালে পোস্টিয়ে‚ দুধের স্বাদ পিটুলি গোলায় মিটবে অবশ্যই! তাই আড্ডাঘরও যে রিয়েল ঠেকের একটা সিমুলেশনই হবে সে আর আশ্চর্য কি! ধরা যাক একটা ক্লাব - কেউ স্নুকার-টিটি খেলে‚ কেউ 'আরে ভটচাজ ট্যুর থেকে কবে ফিরলে' করে‚ কেউ টিভি দেখে আর কেউ বা শুধুই ড্রিঙ্ক করে বাড়ি চলে যায় কারুর সাথে কথা না বলে|
অড্ডাঘর ও সে রকমই প্রায়| অপন জেঠু ঝোড়োদা মুনিয়াজী মণি মাসি সাহাদা বাবিদা ডালিয়া মাসি শ্রী অর্ণব হিমু মনোজদা সুদীপদা চঞ্চলদা ইরাদি স্তুতিদি অলকাদি শাল্মলী অমি ভোঁদড়দা সুশান্ত ইত্যাদিরা মূলত আসেন আড্ডা মারতে| আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে একটু আধটু সাহিত্যের হাত মকসো ও চলে| শিবাংশু দার ধারাটা আবার ঠিক উল্টো - সাহিত্য করার ফাঁকে ফাঁকে একটু আড্ডা মেরে নেন| তস্য তাত সোমেনদা আসেন মূলত লেখালিখি করতেই| ঝিনুকদি আর জল আবার পুরো ব্রিটানিয়া ফিফটি-ফিফটি! আড্ডা আর সাহিত্যের সমান মিশ্রণ| অরিন্দমদার আড্ডাটাই সাহিত্য| না না‚ কবিতা| আর কবিতাই আড্ডা! আরো অনেকেই আসেন‚ কারুর সাথে হয়ত কথা বলেন না‚ কিন্তু লোকের লেখার রসাস্বাদন করেই এঁদের তৃপ্তি| বারে বসে চুপচাপ দুটো পেগ সময় নিয়ে শেষ করে বাড়ি চলে যান - আমরা কেউ তাঁদের খবর রাখি না| আর আছেন শঙ্খদ্বয়| এরা অনেকটা পাড়ার সেই ছেলেগুলোর মতন যারা ঠেকের রেগুলার attendee নয়‚ কিন্তু ওই ন মাসে ছ মাসে - কিবে‚ ভালো আছিস তো - বলে আবার বারো মাস পরে আসে| ঋত্ত্বিক কেও একই ক্যাটাগরিতে ফেলা চলে প্রায়| তৃপতিদিও একটু অনিয়মিত নানান ঝামেলায়‚ কিন্তু মাঝে মাঝে এসে খবর নিয়ে যায় ঠিকই| নিনা কাকিমার ও আজকাল দেখি একই ধারা| শারদীয়াতে লেখা দেওয়ার পর সুচেদি এসেছিলো কি? মনে পড়ছে না! ক্লাব আছে‚ বার আছে আর মাতাল থাকবে না তা কি হয়? ঠিক ধরেছেন - কুকুরদা| শালা বরোদা থেকে উজিয়ে আসে ঝামেলা করতে|
ছোটোবেলায় দেখেছি পাড়ার কাকুরা হঠাৎই একটা ফাঁকা জায়গায় একদিন বেঞ্চ পেতে বসে আড্ডা শুরু করলো| তার পর থেকে ওই জায়গাটা ওই কাকুদেরই| আসেপাশে কিছু নেই‚ শুধু একটা বেঞ্চ আর কিছু তরুন - দৃশ্যটা কেমন যেন নেড়া নেড়া| আড্ডাঘরের শুরুর দিকতাই ভাবা যাক| এই সব ব্লগ ট্ল্গ রেসিপি ইত্যাদি কিছুই ছিলোনা - শুধু ওই একটা ম্যাড়ম্যাড়ে ব্যানার| ম্যাগো! কে আসে এখানে! তাই আসতাম ও না| তারপর তো শারদীয়ার জন্য হুকুম হলো - লেখা দাও (আবারো আড্ডা শ্রী)| তা লেখা জমা দিতে এসে দেখি ব্যাপরটা আর অত নেড়া নেড়া নেই| বেঞ্চটার মাথায় শামিয়ানা লেগে গেছে| কার বাড়ির থেকে লাইন টেনে একতা বাল্ব ও জ্বালানো হয়েছে| আর আসে পাশে ঘুঘনি ঝালমুড়ির দোকানও দিয়েছে দেখলাম দু একটা| মনে হলো‚ এখানে মাঝে মাঝে আসাই যায়|
পাড়ার ঠেকেও এমনটাই হয় কিন্তু| ঠেকটা যেদিন তমাল কাকু বেঞ্চ এনে শুরু করেছিলো‚ তখন বুকুদা ওখানে আসতো না| তমাল কাকুকে ওর পোশায় না| বুকুদা বলে‚ ওরকম গাম্বাটের সাথে বন্ধুত্ব হয় না| তাই বুকুদা ওই রাস্তা দিয়েই পাশের পাড়ায় আড্ডা মারতে যেত সন্যালদের রকে| সান্যালদের রকটা জমজমাট! খুব হাই লেভেলের আড্ডা হয়| লোকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও আড্ডা দেয় ওখানে|
একদিন ওই রকমই এক সন্ধ্যবেলা বুকুদা যাচ্ছে সন্যালদের রকে‚ তমাল কাকু ডাকলো - বুকু শুনে যা|
-কেন?
-আরে আয়না একবার!
-বল|
-বোস‚ কথা আছে|
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ব্ঞ্চটায় বসে বুকুদা| তমালের আনা বেঞ্চে পাছা ঠেকেতে ইচ্ছে করে না|
-বুকু‚ এবার সরস্বতী পুজো করবো| প্যান্ডেলটার ডেকরেশনটা একটু দেখে দিস| বেশি কিছু না‚ ব্যাকগ্রাউন্ডে থার্মোকল দিয়ে যা হোক একটা কিছু করে দিস! তুই ছাড়া হবে না!
-দেখছি|
বুকুদা চলে যায়| সন্যালদের রকের দিকে যেতে যেতে তমাল কাকুর কথাটা ওর কানে বাজে - তুই ছাড়া হবে না!
পুজোর দু- দিন আগে পাশের পাড়ায় আড্ডা মারতে যাওয়ার আগে ডিজাইনটা নিয়ে বুকুদা যায় বেঞ্চটার কাছে| কিন্তু বেঞ্চ কোথায়? এ তো পুরো দস্তুর ক্লাব ঘর বানিয়ে ফেলেছে প্রায়| দড়মার বেড়া দিয়ে ঘিরেছে খানিকটা জায়গা| মাথায় একটা টিনের ছাউনি| রবিদাদের বাড়ি থেকে লাইন টেনে আলোর ব্যবস্থা করেছে| ক্যারম বোর্ডে চার জন| বাকি চার জন তাস পেটাচ্ছে| আর কিছু ছেলের সাথে তমাল বসে গুলতানি মারছে|
-দেখ এটা চলবে কি না|
-আরে তুই করেছিস চলবে না মানে! দৌড়বে| ও দেখার কিছু নেই| আয় বোস|
-তাড়া আছে| কাল রাতে এসে প্যান্ডেলটা বানিয়ে দিয়ে যাবো| চারটে পাঁচ ফুটের তিন জ পিভিসি পাইপ আনিয়ে রাখিস| আর দুজন হেল্পিঙ হ্যান্ড লাগবে|
- আরে দুজন কিরে! আমরা সবাই থাকবো! একটু বসবি না?
-না রে| তাড়া আছে|
সান্যালদের রকে এসেও বুকুদার কানে বাজতে থাকে - আরে তুই করেছিস চলবে না মানে! দৌড়বে|
তারপর আস্তে আস্তে যে যার জীবন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লো| তমাল কাকু রোজই এসে ক্লাবের তালা খুলে বসতো‚ কিন্তু সকলে সব দিন আসতে পারতো না| টুকুদা বিয়ে করলো| আশিষ কাকু বাইরে কোথায় একটা চাকরি পেয়ে চলে গেল| বাকি যারা কলকাতাতেই রইল‚ তারাও অফিস সামলে রোজ আসতে পারতো না| এলেও মিনিট পনেরো গল্প করে চলে যেত হয়ত| ক্লাবটা ফাঁকাই পড়ে থাকতে লাগলো বেশির ভাগ সময়| বুকুদা রোজই একবার করে আসতো সান্যালদের রকে যাওয়ার পথে‚ কিন্তু ওই টুকুই|
তারপর একদিন তমাল কাকুও পুনেতে চাকরি পেয়ে চলে যায়| পরের ব্যাচের ছেলেরা আসতে শুরু করলো ক্লাবে| ক্লাব ভরলো| আবার খালিও হলো| তারপর একদিন ক্লাবটাই উঠে গেল| ক্লাবের জমিতে এখন বাক্স বাড়ি|
সান্যালদের রকটাও আর নেই| রকে আড্ডার বিষয় বস্তু ক্রমে তরল হচ্ছিলো| গভীর রাতে কেউ কেউ তরল নিয়ে আসর বসাচ্ছিলো রকে| সান্যালরা তিতি বিরক্ত হয়ে রক তুলে দেয়|
সেদিন অর্ণব বলছিলো লেখা কম আসছে|
অনেকে হয়ত আসছেন‚ কিন্তু পড়তে| সবাই লিখলে পড়বে কে? ওই যে বললাম - কেউ চুপচাপ ড্রিঙ্ক করে বাড়ি চলে যান‚ কেউ বা জমিয়ে আড্ডা মারেন| জোর করে তো আর আড্ডা হয় না! সরস্বতী পুজোর পর থেকে সান্যালদের রকে যাওয়ার পথে বুকুদা রোজ একবার করে ক্লাবে আসতো| কিন্তু ওই টুকুই|
James
আড্ডার আড্ডাবাজরা
আড্ডাঘরের পয়লা জন্মজয়ন্তী
(অথবা বালার* পরাধীনতা হইতে মুক্তিদিবস)
লক্ষ লক্ষ লোকের মুখে আজি একই বাণী
দেওয়ালের পোষ্টার গুলো করে কানাকানি
আড্ডাঘরের পয়লা সালগিরা
মুবারক জানাইতে হাজির শতেক অপ্সরা|
আহা‚ সত্যই কি আনন্দ আকাশে বাতাসে‚ হাঁটি হাঁটি পা পা করিয়া আড্ডাঘরের প্রথম জয়ন্তী উদযাপন করিতে সকল আড্ডাবাজ একত্র হইয়াছেন অফ অল দ্য প্লেসেস সাউথ সিটি ম্যলে| কারণ শ্রীমতী চিত্রলেখা দেবী তাহার দিকেই ঝোল টানিতে ব্যস্ত‚ দোষ দিবার কোন উপায় নাই কারণ তিনি বিহনে হরেক সভ্যগণের বাহানা স্মরণে রাখিয়া‚ একত্র করা বড়ই দু:সাধ্য কর্ম|
বন্ধুগণ‚ আইস উপস্থিত আড্ডাবাজদের সহিত পরিচয় করাইয়া দিই| অবশ্যই লেডিজ ফার্ষ্ট‚ উনারা যতই নারীবাদী মঞ্চে বক্তৃতা করুন না কেন‚ বেলাশেষে একটু পাত্তা পাইবার লোভ সম্বরণের ব্যর্থ প্রচেষ্টা করেন| যৎসামান্য তোল্লাই দিলে হিলিয়াম বেলুনের ন্যায় উড়িতে থাকেন‚ নারীবাদীর এজেন্ডা ফটাস ফট|
কমলা ও কালো রঙের শাটিকা পরিহিতাকে অবশ্যই চিনাইয়া দিতে হইবেক না‚ ঘুম ঘুম চক্ষু কারণ তিনি কিঞ্চিৎ সময় পাইলেই নিদ্রা দেবীর ক্রোড়ে ঢলিয়া পড়েন অবশ্য কান তার সদাই খাড়া‚ 'আমার নাম তোমার নামের' দেশ হইতে ফোন আসিবার প্রতীক্ষায়| ব্র্যান্ড নিউ শ্বশ্রুমাতা (চলিত শব্দটির বানান সম্পর্কে শ্রীমতী মাদার অফ পার্লের বিষদৃষ্টিতে পরিবার কোন অভিপ্রায় এই লেখকের নাই)‚ ইয়েস শ্রীমতী চিত্রলেখা যথারীতি আয়োজকের ভূমিকায়‚ কাহারো যাহাতে অসুবিধা না হয় ‚ সর্বদিকেই তাহার দৃষ্টি| শ্রীমতী অ্যাডমিনশ্রী তাহার ট্রেডমার্ক হরিদ্রাবর্ণের পোশাকে সুসজ্জিতা‚ আবডালে লোকে যে তাহা লইয়া তির্য্যক মন্তব্য করে তাহাতে তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত নন- শস্তায় পুরা থান খরিদকরত: নিজের টপ‚ কামিজ‚ শেমিজ‚ ব্লাউজ তো ওস্তাগর মিঞাকে দিয়া সীবন করাইয়াছেন‚ তাহার পতিদেবতা‚ পরমপ্রিয় বুরুনের শার্টও| যাহা বাঁচিয়াছিল‚ তাহাতে টেবিল কভার‚ গবাক্ষের পর্দাও| সাধে কি দুর্জনে তার খিল্লি ওড়ায়? ছোট্ট সর্ব কনিষ্ঠ জলপরী সর্বদাই ভাবিত‚ টুকটাক কিছু তাহার মনে পড়িতেই রহিয়াছে‚ সিন্দুক তোরঙ্গ‚ হামান দিস্তা কেহই তাহার শ্যেনস্মৃতি এড়াইতে পারেন নাই| তাহার অতি প্রিয়‚ চুষিকাঠি‚ ঝুমঝুমে‚ রবারের প্যাঁ পোঁ পুত্তলিকাই বাদ গিয়াছে‚ পাঠকগণ ধীরজ রাখিয়ে‚ শীঘ্রই কলুটোলার আরও গুহ্য কাহিনীর অপেক্ষায়| নাহ তেমন কিছু ঝালমুড়ির আশা না করাই বাঞ্ছনীয় কারন তিনি না খাইয়াছেন না দিয়াছেন ল্যাং| বঙ্গবালার (ও বঙ্গবালের ক্ষেত্রেও সম প্রযোজ্য) জীবন যৌবনে পদার্পণ করিয়াছে অথচ ল্যাং মারেন বা দিয়েন নাই‚ ইহা অবিশ্বাস্য| জনগণ তাহার রচনায় লাইক মারিতে নিবৃত্ত থাকুন‚ তবেই যদি তিনি সেইসব সুমিষ্ট জিলিপি পরিবেশন করেন পুরীর সহিত| শেষপাতে কুলের হাত আচার য্যায়সা তাহার উদ্ধেশ্যে লিখিত বিবর্ণ পত্রাদি- " প্রিয়তমা‚ কলুটোলা হইতে প্রেসির পাশ দিয়া শর্টকাট লইয়া তুমি যখন কলেজ স্কোয়ারের ডোবায় সন্তরণ শিক্ষার্থে যাও‚ আমি প্রত্যহ হিন্দু হোষ্টেলের মুখ্যদ্বারে অপেক্ষা করি‚ তুমি কভূ চাহিয়াও দেখিলে না!"
ইরা চৌধুরীও উপস্থিত তাহার অবিরাম ভ্রমণ সূচীর ক্ষণিক বিরতিতে‚ শীঘ্রই বাং কি মুন তাহাকে বিশ্ব ভ্রমণ দিবসের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর নিযুক্ত করিবেন| বৃষ্টিদেবী আড্ডাঘরের খরা কাটাইতে বিন্দুমাত্র আগ্রহী নন‚ তাহার সম্বন্ধে এই লেখক কিছুই অবহিত নহেন‚ সেই হেতু মন্তব্যে অপারগ|
এইবার উপস্থিত ছোঁড়াদের বর্ণনা দিব; দীপুদা অযাজ ইউজুয়াল রক্তবর্ণ টীশার্ট ও তাহার স্কন্ধ হইতে উপবীতের ন্যায় ক্যামেরার বেল্ট শোভা দিতেছে‚ সাহেব শঙ্খ ভোজ্যবস্তুর তদারকিতে নিবেদিত প্রাণ| শার্দূল মগধাপতি শ্রী শ্রী ২১৬ (২ গুণিতক ১০৮) তাহার বিচিত্র ঝুলি হইতে কখনও রাগিণী কিরোয়ানি‚ কখনও বা নিষ্যন্দ মধু কখনও বা শাক্যমুনি সন্দর্ভ বিলাইতেছেন‚ রামপ্রসাদের ন্যায় তবিলদারি করিয়াও এইরূপ অধ্যাবসায় খুবই কম বঙ্গসন্তানের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়|
এবার জায়েন্ট স্ক্রীনের প্রতি অবলোকন করা যাউক; ওলন্দাজ নগরবাসিনী ডিয়ার ডালিয়াদি ও সদা গম্ভীর হেডমিস্ট্রেস উপস্থিত| ক্যালি হইতে শ্বেতবসনা‚ হীরক ভূষিতা শ্রীমতী নতুনদি দুই হস্তে ডাম্বেল তুলিতেছেন - তিনি অত্যন্ত নিয়মানুবর্তী (বর্ডারিং অন ফ্যানাটিক)‚ আড্ডাঘরের জন্ম জয়ন্তী বলিয়া ডাম্বেল তুলিয়া রাখিব‚ কভূ নহে|
অপনদা পারুল বৌদির পুষ্প উপহারে সকলকে অভ্যর্থনা করিতে ব্যস্ত‚ তিনি যে পরিবারের বয়:জ্যেষ্ঠ|
* আজিকার ছোঁড়াগণ এ কার দিতে চাহে‚ লেখকের পক্ষে তাহা না মুমকীন|
(চলিবে আড্ডাঘরে)

মুনিয়া
আড্ডাঘর এবং মি: রে
বছরখানেকের আর তার চেয়ে খানিক বেশী কিছু সময় ধরে পূর্বাশ্রমে সেই সময়ে আমাদের মানসিক হতাশা আর দৈন্যদশা চলছিল। যুগ পার করা লেখালেখির মাধ্যমে গড়ে ওঠা আত্মিক বন্ধনে তখন টানাপোড়েনের অনিশ্চিত কালো মেঘ। বালার খামখেয়ালিপনায় বিতৃষ্ণ অনেক বন্ধু নতুন ঠিকানায় বদলি নিয়েছেন। কয়েকজন দুই নৌকায় পা দিয়ে ব্যালেন্স করে চলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আর আমার মত দুই একজন তবুও মুখ গুঁজে পড়ে আছে সুদিনের অপেক্ষায়। প্রতিদিন মানসিক চাপ অনুভব করি মুখবইয়ে বন্ধুদের দলে ভীড় বাড়াবার। একদিকে মুখবইয়ের জগতে স্বচ্ছন্দতার অভাব, অন্যদিকে বন্ধুত্বের অমোঘ টান। অবশেষে হৃদয় জয়ী হয়। যোগ দিই তাঁদের দলে। যোগ দিই বটে, কিন্তু সে জগতে আকাট আমি সেই চেনা আমেজটি খুঁজে পাইনা। বহুদিনের অভ্যস্ত কথাবিনিময়ের তলমিলের সহজ আদানপ্রদান কোথায় যেন গতি হারায়।
এই ঘটনার মাস তিনেক আগে (৩০ শে এপ্রিল, ২০১৫)অপনকাকু মজলিশের হাটের মাঝে একটা প্রশ্ন রেখেছিলেন, "আচ্ছা মজলিশের মত একটা parallel Web site খোলার কতখানি ঝামেলা| কত খরছ্? এ পাতায় অনেকে আছেন টেক স্যাভি| কেউ কি ভার নিতে পারেন্? আমি কিছু contribute করতে রাজি| হয়ত অন্যরাও এতে যোগ দেবেন্| আসে পাসে এত গ্রাফিকস থাকবেনা| সুতরাং অনেক স্টোরেজ হবে না| আমার এমেল ID হচ্চে ------যদি এই প্রপসালটা ভায়াবেল হয় তাহলে আমার সংগে যোগা যোগ করতে পারেন্|"
অপনকাকুর প্রশ্নটি কারুর মনে কোনো অনুরণন তোলেনি, শুধু একজন বাদে। নীরবে তিনি তাঁর কাজে নেমে পড়েন।
অপনকাকুর প্রশ্নের ঠিক এর তিনমাস পরে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি আসে। ৭তই জুলাই ২০১৫। অপনকাকু, আমাদের ভাব বিনিময়ের এক নতুন ঠিকানা দেন।
"আচ্ছা‚ যদি কেউ আর একটা ওএব পেজ তৈরী করে এই পাতার মত তবে কি সেখানে আমরা সকলে যাব? বালার প্রথম ব্যবহারে আমি ঐটে সাজেস্ট করেছিলাম্| এখন এই পাতায় উমা‚ নবনীতা‚ অরিন্দম‚ জল‚ সোমা‚ ডালিয়া‚ মনিকুন্তলা‚ মনোজ বাবু‚ দিপংকর বাবু‚ অর্ণব (মাঝে মাঝে ও সব সময় তাই) প্রবুদ্ধ ( মাঝে মাঝে)‚ স্তুতি‚ নিনা (মাঝে মাঝে) আর আমি ছারা কেউ এ পাতায় আসে না| নতুন পাতা মজলিশের পুরান রুপ নিয়ে আসতে পারে| যদিও তখন আমি জানতাম না বালা কতখানি কি করবে| এখন কয়েকটা অসুবিধে থাকা স্বত্তেও আমরা মোটামুটি এই পাতায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি| ব্যক্তিগত ভাবে আমি টানাপোরেনের মধ্যে আছি| এ পাতার একটা ভাললাগা আছে| তাই আমি ফেস বুকে লিখিনা| নতুন পাতায় যদি সবাই অংশ গ্রহন না করে তবে একুল যাবে আর ওকুল ও যাবে| একটা হ্যাঁ বা না জানালে ভাল হয়|"
অপনকাকু ঠিকানার দেন আর তারসাথে দেন এক চিমটে হেঁয়ালি। এই নতুন পাতার স্রষ্টার নাম উহ্য রেখে দেন প্রাথমিকভাবে। অনেকের কাছে সেটা অস্বস্তির কারণ হলেও আমার দিব্যি আমোদ লেগেছিল। সেইসঙ্গে নিশ্চিত ছিলাম এ পাতার মস্তিষ্ক অপনকাকু কিন্তু হৃদয় নবনীতা বা অর্ণব, কেউ একজন হবেন। নবনীতার সাথে আমার সম্পর্ক সৌজন্যতায় সরল আর অর্ণবের সাথে অতীব জটিল। পুরোনো লোকেরা জানবেন, আমাদের মতের কোনোদিন মেলেনা। শুধু মেলেনা বললে কম করে বলা হবে। মত বিনিময়ে আমাদের অবস্থান উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরু। মনে আছে ' পিকু' দেখে বোর হয়ে সে অনুভব যখন মজলিশে জাহির করেছিলাম তখন অর্ণব লিঙ্ক চেয়েছিলেন মুভিটার। আমি অবাক হয়েছিলাম,লিঙ্ক দিয়ে বলেছিলাম, অতি খাজা মুভি। তার উত্তরে উনি জানান- "thanksআমার দেখার ইচ্ছে ছিল না খুব একটা কিন্তু আপনার খুব বাজে লেগেছে‚ তাই আমি confident আমার ভালো লাগবে| BB থেকে শুরু‚ পরে আরো অনেক কিছু দিয়ে বুঝেছি আমার যে গুলো বা যাদের খুব বাজে লাগে তারাই আপনার favourite and vice versaদেখি এবারো মেলে কিনা|" কেমন লেগেছিল মুভিটা তার ফিডব্যাক যদিও পাইনি তবুও আন্দাজ করে নিতে অসুবিধে হয়নি :))
তবুও এ পাতায় যোগ দিতে আমি একটুও কুন্ঠাবোধ করিনি। আর তার কারণ অর্ণবের সাথে যতই মতানৈক্য হোক, পরস্পরের প্রতি তিলমাত্র শ্রদ্ধার অভাব কখনো হয়নি। তাই অমত ছিল অথচ অশ্রদ্ধা ছিলনা কোনোদিন। মনে আছে একবার কথা চালাচালিতে মজলিশে অর্ণবকে জিজ্ঞেস করেছিলাম-
-" অর্ণব, দেখুন, আপনি লিখলেন আর সমাধান হাজির. আপনি কি বালার সম্পা? ঠিক কথা বলুন!" উত্তর এসেছিল,
-" আমি সম্পাদক হলে আপনার জ্বালাময়ী লেখাগুলো edit হতো না? :)-"
আমার আন্দাজকে সঠিক প্রমাণিত করে অর্ণব একদিন আড্ডার স্রষ্টা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তারপর থেকে এক বছর কেটে গেছে। মতামত নিয়ে আমাদের অবস্থান এখনো দুই মেরুতে কিন্তু আমার তরফ থেকে শ্রদ্ধা বেড়েই চলে। নিজের ব্যক্তিগত সময় বলিদান করে, দিনরাত এক করা কঠিন পরিশ্রম, আড্ডাকে শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার অসামান্য প্রচেষ্টায় অর্ণব একদিন আমাদের কাছে মি: রে হয়ে ওঠেন। আরো একটা ব্যাপার শ্রদ্ধার উদ্রেক করে। পুরাতন আড্ডায় অর্ণব কেবল একজন সদস্য ছিলেন, সাদা বা কালো, ওনার মতে যা যেমন তা নি:সঙ্কচে উচ্চারণ করতে বাঁধত না তাঁর। অপরদিকে আড্ডাঘরের মি:রে, সেই অবস্থান থেকে কিছুটা দূরে।বেশ খানিক পরিণত। দায়িত্বের গুরুভার পুরোটা না হলেও ওনাকে খানিকটাতো বদলেছেই। সম্পর্কের পুরোনো সমীকরণকে সরিয়ে রেখে সবাইকে আন্তরিকভাবে ডাক দিয়েছেন আডডাঘরের সূচনার দিন থেকেই। গত এক বছরে সদস্য সংখ্যা উত্তোরত্তর বেড়ে চলেছে। যাঁরা এখনো আসেননি, যাঁদের আমরা প্রতিনিয়ত মিস করছি তাঁদের অনুরোধ করব প্লিজ আসুন। মি: রে এর সাথে অমত পোষন করলে তেড়ে তর্ক করুন। আমি বলছি, লেখা এডিট হবেনা :)
মি: রে এর কাছে বিনম্র অনুরোধ রইলো, দায়িত্বের এই বিশাল কর্মকান্ড কখনো কখনো শ্বাসরোধ করে দেবে হয়ত কিন্তু মানুষের সহমর্মিতাকে অনুভব করতে আর সত্যিকারের শুভানুধ্যায়ী, আশীর্বাদককে চিনতে-বুঝতে যেন কোনদিন ভুল না হয়ে যায়। জীবনে তাঁরা বড়ই অপ্রতুল। অনেক শুভেচ্ছা আর শুভকামনা রইলো আড্ডাঘরের প্রথম জন্মদিনে আর আগামী দিনগুলির জন্য। আড্ডাঘরের জনপ্রিয়তা আপনার আর শ্রীময়ীর কাঁধে ভর দিয়ে আকাশের উচ্চতায় পৌঁছোক। আমেন!

অর্ণব(অরিন্দম রায়)
বাংলাআড্ডা কোন পথে
৬ জুলাই‚ ২০১৫ এর রাত| অপন জেঠুকে জানালাম সাইট আত্মপ্রকাশের জন্য তৈরী‚ আপনি জানিয়ে দিতে পারেন সবাইকে| একবার শেষবারের গোটা কয়েক টেস্টিং করে ঘুমোতে চলে গেলাম|
মনের মধ্যে নানা আশঙ্কা ছিল| এক তো অপন জেঠু সবাইকে জানাবেন তো? আমার মনে আছে‚ বলেছিলেন দেরী হয়ে গিয়েছে| এখন সবাই fb মজলিশে মানিয়ে নিয়েছে‚ কেউ আসবে না| কথাটা মিথ্যে ছিল না| সবকিছুর ই একটা উপযুক্ত সময় থাকে and I was late| কেউ না আসলে‚ সাইটটা না চললে কি হবে ভেবে মন খারাপ করছিল কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি সেটা কাটিয়ে উঠলাম| চিরকালের pessimistic আমি| কিছু করার আগে failure path টা নিয়েই বেশী চিন্তা করি‚ ভেবেই রেখেছিলাম না চললে না চলবে‚ আমি তো শিখলাম কি করে website বানাতে হয়‚ সেটাই আমার return|
অবশ্য আশাও একটা ছিল| মনে মনে বিশ্বাস করতাম fb কোনদিন মজলিশের replacement হতে পারে না| দুটোর ই উপযোগিতা আছে আর এদের উদ্দ্যেশ্য ভিন্ন‚ coexistence টাই স্বাভাবিক| এই যেমন গুরুচণ্ডালি সাইট আর fb page দুটো ই রমরমিয়ে চলে - এটাই ভবিতব্য‚ এটাতে পূর্ণ বিশ্বাস ছিল|
যাই হোক‚ সেই রাতে স্বপ্ন এল| দেখলাম পাতাগুলো লেখায় ভরে গিয়েছে| ঠিক কখন ঘুম ভেঙেছিল মনে নেই‚তবে সে আমার সময়ের অনেক আগে| প্রথমেই মেইল খুলে দেখলাম অপন জেঠু fb মজলিশের একটা পাতার screen shot পাঠিয়েছেন‚ সেখানে ওনার পোস্ট আর তাতে সবার reaction| খুব তাড়াতাড়ি সাইটটা খুলে ফেলেই যে আনন্দ হল‚ সে আনন্দ জীবনে আর একবার ই হয়েছে (ISI interview তে বাঘা বাঘা অঙ্কের শিক্ষকদের সামনে অঙ্ক করতে পেরে)| এতজন আসবেন‚ লিখবেন‚ বিশ্বাস ই ছিল না|
এর পরে আমরা পেরিয়ে এসেছি দীর্ঘ পথ| একটা rudimentary খাঁচা থেকে এই সাইট অনেক দূর চলে এসেছে| এটা অহংকার নয়‚ পূর্ণ বিশ্বাস থেকেই বলতে পারি বাংলা ভাষায় এত feature rich আর কোন সাইট নেই| তবে এটাই সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ কথা নয় ‚ গুরূত্বপূর্ণ হল এই যে সাইটের এই উন্নতিতে প্রায় প্রতিটি সদস্যের active contribution আছে| এই যে feature গুলো নিয়ে বুকের ছাতি উঁচু করলাম - এর প্রত্যকেটার concept টাই কিন্তু এসেছে সদস্যদের কাছ থেকে| আমি শ্রীকে মাঝে মাঝেই বলি coding করাটা হাতি ঘোড়া কিছু না‚ পয়সা ফেললেই coder পাওয়া যাবে কিন্তু সাইটের প্রাণ হলো concept.
যাই হোক‚ এই কথাগুলো তো অনেকদিন ধরেই বলে এসেছি| যেটা বলার জন্য আজকের লেখা - কোথায় চলেছি আমরা? কি করতে চাই? আমদের যাত্রা শুরু হয়েছিল‚ মজলিশের একটা replacement service হিসেবে‚ একটা বিদ্রোহ থেকে - সে সব উদ্যোগের ই একটা শুরুর গল্প থাকে‚ আমাদেরো আছে|
কিন্তু মজলিশ কোন একক সাইট ছিল না| ছিল an arm of bangalive| একক ভাবে শুধুই গল্প করা বা সুখ দু:খের খবর নেওয়ার কোন সাইট বেঁচে থাকতে পারে না| এই facebook, whatsapp এর যুগে তো পারেই না| জানি কিছু লোক আছেন‚ যাদের social networking ভালো লাগে না‚ না বয়স্কদের দিকে আঙুল তুলছি না| আমার এক এক batchmate কে চিনি‚ আজো fb নেই‚ আমি নিজেও whatsapp এ আসব না বলে বিদ্রোহী ছিলাম এক বছর আগেও - কিন্তু থাকা যায় না| দুনিয়াটা যখন পাল্টে যাচ্ছে দ্রুত‚ সেই পরিবর্তনকে অস্বীকার করে থাকা হয়তো যায় কিন্তু সে খুব সুখদায়ক নয়|
আমরা গুরুচণ্ডালি হতে চাই না‚ মননশীল লেখার জায়গাটা থাক| আমরা fb হতে চাই না‚ টুকটাক এক দুই লাইনের মেসেজ‚ লাইক পাওয়ার জন্য ঘন ঘন ছবি‚ এক দুই লাইনের বিদ্রোহ‚ অন্যের পোস্টকে শেয়ার করে দেওয়া - fb ছিল থাকবে| আমরা সত্যিকারের বাঙালী আড্ডার সাইট হয়ে উঠতে চাই|
মোহিতলালের একটা পোস্টের কথা খুব মনে পড়ছে| উনি লিখেছিলেন - বাঙালীদের জীবনে "খানা খায়া‚ মুভি দেখা" র বাইরেও কিছু থাকে| থাকে সত্যিই‚ এটাই আমাদের USP| আমাদের আড্ডা মানে শুধুই শরীর স্বাস্থ্যের খবর নেওয়া‚ হাল্কা লেগ পুলিং‚ দুটো ছবি দেওয়া নয় - আমাদের আড্ডাতে সত্যজিত‚ মৃণালের পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে আসে জিমে দৌড়নোর গল্প‚ নো কার্ব খাব কি খাবো না‚ কোথায় ঘুরতে গেলাম বা কি নতুন রান্না করলাম‚ বুদ্ধ না মমতা‚ মোদী না কেজরিওয়াল‚ সুনীল না শীর্ষেন্দু সব কিছু| একথায় বাঙালীর আড্ডা content rich|
আমরা এই জায়গাটা ই নিতে চাই| content rich একটা সাইট কিন্তু আড্ডার মেজাজে| যেখানে শুধু মনের ক্ষিদেই মিটবে না‚ মিলবে শরীর স্বাস্থ্যের তত্ত্বতালাশ ও| রেসিপি দেখে রান্না করার ফাঁকে পড়ে নেওয়া যাবে উইকএন্ডে প্ল্যান করা সিনেমাটার রিভিউ| বেড়াতে যাবেন কোথায়‚ কি কি দেখবেন সবই পাওয়া যাবে আমাদের সবাইকার এই সাইটে| মিলবে মনস্তত্ত্বের হদিশ‚ সুন্দর সুন্দর ফটো গ্যালারি‚ পাক্ষিক ম্যাগাজিন ও| আর এই সব ই বানাবো আমরা সদস্যরা মিলে| কখনো দরকার হলে সাহায্য নেওয়া হবে কোন গেস্ট রাইটারের|
সঙ্গে থাকবেন তো‚ বন্ধুরা? জানার অপেক্ষায় রইলাম| শুভেচ্ছা সহ‚ অর্ণব (অরিন্দম রায়)

প্রবুদ্ধ
গাড্ডাঘরের জন্ম
ঠক ঠক|
কাকু সামনের ঘরেই শুয়েছিলেন| সবে চোখটা একটু লেগে এসেছিলো| দিবানিদ্রা‚ বাংলায় যাকে শিয়েস্তা বলে‚ সেসবের অভ্যেস কাকুর কোনোদিনই নেই| তবে আজি প্রভাতে কাকিমা ধ্রুপদী সঙ্গীতের সিডি চালায়েছিলেন‚ তাতে এখনো সেই রবিবাবুর শিহরে তরুলতার মতো কাকুরও অন্ত:করণ মাঝে মাঝে শিউড়ে উঠছে| তাই সোফাতেই একটু লম্বা হয়েছিলেন|
আলস্য ভেঙ্গে দরজা খুলে দেখেন গোটা ছয়সাতেক ষন্ডাগুন্ডা যুবক বেশ ভদ্রভাবে দাঁড়িয়ে আছে| সামনের মোটাসোটা ছেলেটি‚ নাম বুদ্ধু‚ নিজেকে বেশ স্মার্ট ভাবে‚ অনেক কথা গুছিয়ে এনেছিলো‚ হটাৎ সামনে সৌম্যদর্শন কাকুকে দেখে একটু ঘেঁটে যায়| তবু জেল লাগানো চুলে হাত চালিয়ে ভেজা হাত ধেৎ বলে প্যান্টে মুছে চিনিমাখানো গলায় বলে‚ ---ইয়ে মেসোমসায়‚ আমরা বালানগর থেকে আসচি স্যার| আমাদের লীডার আলুদা‚ ঐ ওদিকে একটু পার্সোন্যাল কাজ সেরেই আসচে‚ উনি আপানার সাথে একটু মশলা কর্বেন| হে হে|
কাকু বুঝতে পারেন না এই দুপুরে এতগুলি বেপাড়ার ছেলে মশলা চাইতে হঠাৎ ওঁর বাড়ী কেন এলো| ততক্ষণে সিগারেটটা নিভিয়ে আলু নামের লম্বা একটি যুবক‚ দেখতে বেশ সম্ভ্রান্ত‚ সীনে চলে এসেছে| এসেই বুদ্ধুকে সামনে দেখে কেস গেজে নেয় (gauge করে নেয়)‚ আর বুদ্ধুকে এক কাঞ্চাপাটি মেরে সাইড করে দেয়| তারপর একটু গলা খাঁকরে বলে‚ ইয়ে কাকু একটু বসা যাবে?
--হ্যাঁ হ্যাঁ এসো না সবাই|
সবাই আসে| কাকু লক্ষ্য করেন শুধু যুবক নয়‚ হলুদ জীনস পরা এক যুবতীও আছেন দলে‚ যিনি সোফায় গুছিয়ে বসেই একখানি সেলফি নেন‚ মুখখানি অকারণেই হাসি হাসি করে| কাকু তাকেই আগে বলেন‚
---মামণি তুমি জলটল কিছু খাবে? রোদে ঘুরছো মনে হয়
মামণি! বুদ্ধুর চৈনিক চক্ষুদ্বয় বিস্ফারিত হয়‚ আর একটু হলেই বিকট শব্দে হেসে উঠতো‚ কোনোরকমে সামলায়| মামণিও একটু লজ্জা পেলেন বোধয়‚ না না বলে ঘাড় বেঁকিয়ে একটু জড়োসড় হয়ে বসেন| অন্তরের তেজ কিছুক্ষণের জন্য বক্সড আপ থাকে|
--হ্যাঁ বলো এবার বাবাসকল‚ কি ব্যাপার|
আলুই মুখ খোলে| লেখাপড়া জানা ছেলে‚ নামের শেষে দম ছিলো‚ স্বাভাবিক নিয়মে আলুরদম‚ তার থেকে আলু‚ তার থেকে আলুদা|
কথা বলতে গিয়ে আলুর সম্ভ্রান্ত মুখখানি হঠাৎ আরশুলার মতো করুণ হয়ে যায়| একটু ভেবে বলে‚ --বুঝলেন কাকু‚ বালানগরের সাথে একটু কিচাইন হয়ে গেছে| (কাকু শব্দটা নোট করেন| মানে না বুঝলেও বেশ প্রেমাস্পদ কোনো অর্থ নেই সেটা বুঝলেন| পরে কাকিমাকে জিগ্যেস করে নেবেন)
তো কেসটা হলো‚ ওখানে কিছু ধারালো পাব্লিক অছে‚ আমাদের বিসেস প্লেস হতে দিচ্ছে না| ঠেকেও সেকেন্ড বেঞ্চে বসিয়ে রাখে‚ মোন খুলে কতাই বলা যায় না মেসোমসায় (কাকু থেকে মেশোমশাই|)
সমস্যাটা গম্ভীর‚ সেটা মেশোমশাই‚ মানে কাকু বুঝতে পারেন| কিন্তু তিনি কি করে এর সমাধান করবেন সেটা.....
----আমরা একটা ক্লাব খুলবো কাকু| (মেশোমশাই থেকে কাকু)| আপ্নি তো বিল্ডিং লাইনের লোক (কাকু বড়ো ইঞ্জিনীয়ার)‚ ঘরটার একটা ডিজাইন করেছি একবারটি যদি দেকে দিতেন স্যার (কাকু থেকে এবার স্যার)
যাক‚ অল্পের ওপর দিয়েই যাবে মনে হয়‚ এই ভেবে কাকু বলেন তা বেশ তো‚ দেখি কি ভেবেছো|
---আ--আপ্নাকে বেসি কিছু লোড নিতে হবে না কাকু‚ সুধু এই ওপর-ওপর একটু দেকে দেবেন| এই এ বললো (মামুনির দিকে দেখিয়ে বলে) বিল্ডিংটা বেশ ঝিঙ্কু হওয়া চাই নইলে পাব্লিকে ভাও দেবে না‚ ক্লাবঘরের সামনে ট্রাফিক জ্যাম হওয়া চাই| তাই এলাম মেসোমসাই (আবার কাকু থেকে মেশোমশাই)
কাকু কিছু বলেন নিজের মতো করে| তা আলুর আবার সবেতেই একটু টিকটিক করা স্বভাব‚ একটু খুঁতখুঁত করে বলে‚ না কাকু| আমার বলে কিনা কতো ইচ্ছে ডানদিকে বাঁদিকে কিছু করি তা আপ্নি তো স্যার চার্দিক ক্যামোন ঘিরেঘিরে দিচ্ছেন (না-চিবো ঘিরিঘিরি নাকি‚ কাকু মনে মনে হাসেন)|
----ক্লাবঘর তো নিজেদের আড্ডা দেওয়ার জায়গা বাবারা| এতো ঝকমক করে কি হবে? এ তো আর বিয়েবাড়ী নয়|
বুদ্ধুর এতোক্ষণ বসে থাকার অভ্যেস নেই| হঠাৎ গাঝাড়া দিয়ে উঠে বলে‚ তা কেউ বিলা করলে তার বাপের বিয়ের সার্ভিসও চালু কর্তে পারি
কথা শেষ না হতেই আবার এক থাবড়া| আলুর সামনে বুদ্ধু আবার বেশী খাপ খোলে না| চুপ করে বসে যায়|
কথাবার্তা আরো চলতো| এমন সময় পর্দা সরিয়ে কাকিমার প্রবেশ| চিন্তিত মুখ‚ কিন্তু কি তেজ আর লাবণ্য‚ সরু ফ্রেমের চশমার পেছনে চোখের কি দীপ্তি| ঘরে ঢুকেই এতোজনকে দেখে একটু থতমত খেয়ে যান| তারপর বলেন‚ ও মা এতগুলি ছেলেমেয়েকে এইভাবে বসিয়ে রেখেছো? ওরে তোরা এখানেই বিকেলের জলখাবার খেয়ে যাস|
সে আওয়াজে কি ছিলো‚ ছেলেমেয়েগুলি আইসক্রীমের মতো গলে যায়| তবু আলু টিকটিক করে‚ না না থাকি মাসিমা‚ আপনাকে দেখে বেস টায়ার্ড লাগছে|
বুদ্ধু খাওয়ার কথায় প্রবল উত্তেজিত হয়ে পড়ে‚ বলে আরে আলুদা তুমি সেলোটেপ লাগাও তো বেসি মটকা গরম কোরো না| না না মাসিমা আমরা সব খেয়েই যাবো|
কাকুর স্ত্রী মাসিমা কিন্তু সত্যি ক্লান্ত ছিলেন| বুদ্ধুকে দেখে সরল সাদাসিধা লাগায় তার দিকেই তাকিয়ে বলেন‚ আসলে বাবা‚ চিন্তার কারণ আছে| তোমাদের এক পিসিমা এসেছেন আজ বাড়ীতে‚ একটু ছিটিয়াল| বলছে বাগান থেকে এক মানুষ সমান এক কলাগাছ তুলে নিয়ে যাবে‚ বাড়ীতে তাতে কুমড়ো ফলাবে| আচ্ছা তুমিই বলো বাবা‚ এ কি পাগলামি| ----আরে কোনো প্রব নেই কাকিমা (মাসিমা থেকে কাকিমা)‚ আমি ঐ সব ছিটিয়াল কেস অনেক টেকাপ করেছি| আপ্নি সুধু উনাকে আমার ফ্রন্টে বসিয়ে দিন আমি সব সেট করে দিচ্ছি| কাল থেকে কলাগাছ দেখে চিনতেও পারবে না সেরকম ওসুদ দিয়ে দেবো দুডোজ|
বুদ্ধু এটুকু বলেছে কি বলেনি‚ ভীমবেগে পর্দার পেছন থেকে উলের গ্লাভস পরা এক রমণী ধাঁ করে তেড়ে এসে বুদ্ধুর থ্যাবড়া নাকে ধড়াম করে এক মাকালী ১০০ নং দেশী সাইজের পাঞ্চ ল্যান্ড করে দেন| বোধয় পর্দার আড়াল থেকে শুনছিলেন‚ বুদ্ধুর প্রগলভতা সহ্য করতে পারেন নি| বুদ্ধু দু মিনিট বোধিবৃক্ষের ওপর শাখামৃগের মতো বসে থাকে‚ তারপর "কাকিমাআআ" বলে রণভুমিতে লুটিয়ে পড়ে|
গোলযোগের আভাস পেয়ে রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে সাদা চুলের পড়শী দাদা বিড়বিড় করে "গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব‚ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব" বলে দ্রুত দিগন্তের দিকে বিলীন হন| আর পাশের বাড়ীর মণিমাসিমা হাসি হাসি মুখে জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে জিগ্যেস করেন‚ হ্যাঁ গা তোমাদের বাড়ী কি আজ কারুর জন্মদিন?