এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাব.....
দেখতে দেখতে এক বছর পেরিয়ে গেল.... গোটা একটা বছর, "এক দো তিন, চার পাঁচ ছে সাত আট নও, দশ গেয়ারা" গিন গিন করে পাক্কা বারোটা মাস, তিনশো পঁয়ষট্টি দিন.....
আমাকে পড়লে মনে খুঁজো এইখানে
এখানে খুঁজছি আমি জীবনের মানে....
শুভ জন্মদিন আড্ডা। শতায়ু ভব। সুন্দর থেকে সুন্দরতর হও, দিনে দিনে আরো সমৃদ্ধ হয়ে ওঠো। পথ দেখাক স্বর্ণালি আগামী। এই দিন আর তুমি ফিরে ফিরে এসো বার বার জীবনে আমাদের। অনেক সোহাগ আর বৃষ্টিভেজা টাটকা জুঁইয়ের জোড়াসুতোর মালা জন্মদিনের উপহারে তোমার জন্য।
সেই ওয়ান নট সো ফাইন মর্নিঙে ঘুম ভেঙে দেখি মজলিশ আবার আগাপাশতলা খোলনলচে বদলে ফেলেছে। বলা নেই, কওয়া নেই, কারও মতামতের, সুবিধা অসুবিধার তোয়াক্কা না করেই নিতি নিতি ভোল পাল্টানো মজলিশের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এই শেষের চমকটা একটু বেশিরকমের বাড়াবাড়ি বলেই প্রমাণ হল। লিখতে গিয়ে নাজেহাল, পুরনো লেখাপত্র সব গায়েব, সব সহ্যেরই বোধ হয় একটা সীমা থাকে। সেই সীমা সেদিন টুটে গিয়েছিল। তাতে অবশ্য কর্তৃপক্ষের কিছু এসে যায় না কস্মিনকালেও, এক্ষেত্রেও তার কোন অন্যথা হয় নি। কিন্তু মজলিশ ছত্রখান হয়ে গেল। মজলিশে শেষ পোস্টটা করে বেরিয়ে এসে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
কেমন একটা নেশার মত হয়ে গিয়েছিল সেই খোলা আড্ডাটা, কখন যেন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছিল মজলিশের বৈঠকখানাটা। তাই মন খারাপ হওয়া তো অস্বাভাবিক কিছু নয়। ঋত্বিকের প্রচেষ্টায় আস্তে আস্তে মজলিশ মুখবইতে ট্র্যান্সফার হয়ে গেল। অনেক নামী দামী লেখকদের ভালো ভালো লেখা পড়ার সুযোগ হল নিয়মিত, মজলিশে যারা কোনদিন লিখতেন না। সবই হলো, কিন্তু ঐ ইংরেজি হরফে বাংলা পড়ে আর প্রত্যেকবার কপি পেস্ট করে বাংলা লিখে আড্ডা ঠিক তেমনটি যেন আর জমলো না। এমন একটা দোলাচলের সকালে বাংলা আড্ডা জন্মালো। এসে দেখি বেশ কয়েকজন চেনা বন্ধু নাম লিখিয়ে গেছেন। আর দিব্যি বাংলাতেই লিখে আড্ডা দেওয়া যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে আমার চাটাইখানা নিয়ে উঠোনের এককোনায় লেপে পুঁছে পেতে বসে গেলাম। সত্যি কথাই বলি, খুব ভালো লেগেছিল আমার সেই প্রথম দিনেই। আজকের মত এত খেলনা, এত রংবাহারী সাজপোষাক সেদিনের আড্ডার ছিল না। তবু মনে হয়েছিলো, বাহ, বেশ নির্ভাবনায় বাংলায় আড্ডা দেবার তাহলে একটা পাকাপাকি জায়গা হল। অনেক ফিসফাস, কানাকানি, কে, কি, কেন, অনেক সাবধাববাণী শাখায় প্রশাখায়, পাতার আড়ালে সেদিন। ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে সেই গুঞ্জন স্তিমিত হয়ে গেছে, বাকি বন্ধুরাও বেশির ভাগই এসে যোগ দিয়েছেন। জমে উঠেছে আমাদের আড্ডা।
আমার বর্তমান অফিসটা এয়ারপোর্ট চত্বরে। এগারোতলার ওপর থেকে অনেক দূর অবধি অবারিত দৃষ্টি। সারাদিন অগুন্তি প্লেন উঠছে, নামছে। এই যেমন এই লেখা টাইপ করতে করতে দেখছি, একটা প্লেন হাঁটি হাঁটি পা পা করতে করতে এসে দাঁড়ালো রানওয়ের মুখটাতে। একটু পরেই দৌড় শুরু করল, দ্রুত থেকে দ্রুততর হতে হতে বাতাসে ভেসে উঠে গেল আকাশে কি অবলীলায়। কি আশ্চর্য সমাপতন! আমিও তো এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়া আড্ডার গল্পই লিখতে বসেছি--- শুরুর সেই সেদিনে একা অর্ণব ছিল, শ্রী তখনও বেশ কয়েক দিন দূরে। যার যা কিছু অসুবিধা, আবদার, প্রস্তাবনা, সব একলা অর্ণব শুনেছে, উত্তর দিয়েছে, প্রতিবিধান করেছে। একটা সাইট খাড়া করে সেটাকে বেয়ে নিয়ে যাওয়া, প্রত্যেকদিন তার রক্ষণাবেক্ষণ, প্রয়োজনে কলকব্জা মেরামতি একেবারে কিছু নাড়ুগোপালের হাতের মোয়াটি নয়। তার পেছনে প্রচুর পরিশ্রম, সময়, মনোযোগ সব দিতে হয়েছে। সখের বিপ্লব, লেনিন, মার্ক্স, ব্রিজখেলা, বিগ বস, সব শিকেয় তুলে রেখে দিনরাত এক করে খেটেছে ছেলেটা। অনেকবার ভেবেছি, ওকে অন্তত একটা থ্যাঙ্ক ইউ বলি, কিন্তু সেভাবে কোনদিন ধন্যবাদটুকু আর জানানো হয় নি।
আড্ডার পানসিটি বয়ে চললো তরতর করে সময়ের উজানে। যেদিন পাতার সংখ্যা প্রথম একশো ছাড়ালো, হাততালি দিয়েছিলাম আমরা কয়েকজন মিলে। তারপর আরো অনেকগুলো একশো পেরিয়ে গেছে, আড্ডা আজ হাজারের দুয়ারে। এইভাবে আরো অনেক হাজার পেরিয়ে যাক। একে একে ভরে উঠেছে দর্শকের আসন, দীর্ঘ হয়েছে সদস্যের তালিকা, আরো দীর্ঘ হবে আগামীতে। কোন এক শুভলগ্নে শ্রী এসে যোগ দিল আড্ডায়। তারপর একটু একটু করে শারদীয়া থেকে শুরু করে আজ অবধি, ওর আড্ডাখেলা দেখলে আমার বাচ্চাদের পুতুলখেলার কথা মনে পড়ে। নিত্য নতুন জামাটা, চুড়িটা, চুলের ফিতে, কপালের টিপ, পুতুলমেয়েকে আরো সুন্দর করে সাজানোর জন্য। শ্রীরও তেমনি। সারাক্ষণ ওর আড্ডা পুতুলরাণীকে নিয়ে ভাবনায় মশগুল। কি ভাবে সাজালে আরো ভালো হয়, আরো আকর্ষণীয় হয়, কি করে পার্টিসিপেশন বাড়ানো যায় সবার, সর্বক্ষণ সেই ব্রেইনস্টর্মিং চলছে। আর খাটতেও কিছু পারে এই দু'জন, অর্ণব আর শ্রী। যেমন ধৈর্য, তেমনি অধ্যবসায়.... হ্যাটস অফ ট্যু ইউ বোথ। মাঝে মাঝে ভাবি, ভাগ্যিস আমার হাতে নেই আড্ডার কারিগরি হালখানা। কি যে হত তাহলে? ইচ্ছে হল তো এসে পাতাকে পাতা ভাটিয়ে গেলাম, আর যেদিন মনের আকাশ জুড়ে কালবৈশাখী মেঘবৃষ্টি, সেদিন বালিশে মুখ গুঁজে কাটিয়ে দিলাম। পনেরো দিন, একমাস পরে এলেও জানি আড্ডা ঠিকঠাক একভাবেই থাকবে অবারিত দ্বার আমার জন্য। আজ আড্ডার প্রথম জন্মদিনে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে গেলাম তাই দু'জনকেই। সেই সঙ্গে অপনকাকুকেও। আর সবচেয়ে বড় চিয়ার্সটা আমাদের জন্য, আমাদের সুখদুঃখ, হাসিতামাসা, মান-অভিমান, "কেন রে বেটা ইস্টুপিড"--হুলিয়ে ঝগড়াঝাঁটি, একে অপরের ঠ্যাং ধরে টানাটানি---- হিপ হিপ হুররে-এ-এ-এ-এ-এ......
সংস্কৃতির ঢাক তেরে কেটে তাক তাক দমা দম দমা দম কৃষ্টি বিষম-
আমাদের জন্য, সব আমাদের জন্য.....