বছরখানেকের আর তার চেয়ে খানিক বেশী কিছু সময় ধরে পূর্বাশ্রমে সেই সময়ে আমাদের মানসিক হতাশা আর দৈন্যদশা চলছিল। যুগ পার করা লেখালেখির মাধ্যমে গড়ে ওঠা আত্মিক বন্ধনে তখন টানাপোড়েনের অনিশ্চিত কালো মেঘ। বালার খামখেয়ালিপনায় বিতৃষ্ণ অনেক বন্ধু নতুন ঠিকানায় বদলি নিয়েছেন। কয়েকজন দুই নৌকায় পা দিয়ে ব্যালেন্স করে চলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আর আমার মত দুই একজন তবুও মুখ গুঁজে পড়ে আছে সুদিনের অপেক্ষায়। প্রতিদিন মানসিক চাপ অনুভব করি মুখবইয়ে বন্ধুদের দলে ভীড় বাড়াবার। একদিকে মুখবইয়ের জগতে স্বচ্ছন্দতার অভাব, অন্যদিকে বন্ধুত্বের অমোঘ টান। অবশেষে হৃদয় জয়ী হয়। যোগ দিই তাঁদের দলে। যোগ দিই বটে, কিন্তু সে জগতে আকাট আমি সেই চেনা আমেজটি খুঁজে পাইনা। বহুদিনের অভ্যস্ত কথাবিনিময়ের তলমিলের সহজ আদানপ্রদান কোথায় যেন গতি হারায়।
এই ঘটনার মাস তিনেক আগে (৩০ শে এপ্রিল, ২০১৫)অপনকাকু মজলিশের হাটের মাঝে একটা প্রশ্ন রেখেছিলেন, "আচ্ছা মজলিশের মত একটা parallel Web site খোলার কতখানি ঝামেলা| কত খরছ্? এ পাতায় অনেকে আছেন টেক স্যাভি| কেউ কি ভার নিতে পারেন্? আমি কিছু contribute করতে রাজি| হয়ত অন্যরাও এতে যোগ দেবেন্| আসে পাসে এত গ্রাফিকস থাকবেনা| সুতরাং অনেক স্টোরেজ হবে না| আমার এমেল ID হচ্চে ------যদি এই প্রপসালটা ভায়াবেল হয় তাহলে আমার সংগে যোগা যোগ করতে পারেন্|"
অপনকাকুর প্রশ্নটি কারুর মনে কোনো অনুরণন তোলেনি, শুধু একজন বাদে। নীরবে তিনি তাঁর কাজে নেমে পড়েন।
অপনকাকুর প্রশ্নের ঠিক এর তিনমাস পরে সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি আসে। ৭তই জুলাই ২০১৫। অপনকাকু, আমাদের ভাব বিনিময়ের এক নতুন ঠিকানা দেন।
"আচ্ছা‚ যদি কেউ আর একটা ওএব পেজ তৈরী করে এই পাতার মত তবে কি সেখানে আমরা সকলে যাব? বালার প্রথম ব্যবহারে আমি ঐটে সাজেস্ট করেছিলাম্| এখন এই পাতায় উমা‚ নবনীতা‚ অরিন্দম‚ জল‚ সোমা‚ ডালিয়া‚ মনিকুন্তলা‚ মনোজ বাবু‚ দিপংকর বাবু‚ অর্ণব (মাঝে মাঝে ও সব সময় তাই) প্রবুদ্ধ ( মাঝে মাঝে)‚ স্তুতি‚ নিনা (মাঝে মাঝে) আর আমি ছারা কেউ এ পাতায় আসে না| নতুন পাতা মজলিশের পুরান রুপ নিয়ে আসতে পারে| যদিও তখন আমি জানতাম না বালা কতখানি কি করবে| এখন কয়েকটা অসুবিধে থাকা স্বত্তেও আমরা মোটামুটি এই পাতায় অভ্যস্ত হয়ে গেছি| ব্যক্তিগত ভাবে আমি টানাপোরেনের মধ্যে আছি| এ পাতার একটা ভাললাগা আছে| তাই আমি ফেস বুকে লিখিনা| নতুন পাতায় যদি সবাই অংশ গ্রহন না করে তবে একুল যাবে আর ওকুল ও যাবে| একটা হ্যাঁ বা না জানালে ভাল হয়|"
অপনকাকু ঠিকানার দেন আর তারসাথে দেন এক চিমটে হেঁয়ালি। এই নতুন পাতার স্রষ্টার নাম উহ্য রেখে দেন প্রাথমিকভাবে। অনেকের কাছে সেটা অস্বস্তির কারণ হলেও আমার দিব্যি আমোদ লেগেছিল। সেইসঙ্গে নিশ্চিত ছিলাম এ পাতার মস্তিষ্ক অপনকাকু কিন্তু হৃদয় নবনীতা বা অর্ণব, কেউ একজন হবেন। নবনীতার সাথে আমার সম্পর্ক সৌজন্যতায় সরল আর অর্ণবের সাথে অতীব জটিল। পুরোনো লোকেরা জানবেন, আমাদের মতের কোনোদিন মেলেনা। শুধু মেলেনা বললে কম করে বলা হবে। মত বিনিময়ে আমাদের অবস্থান উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরু। মনে আছে ' পিকু' দেখে বোর হয়ে সে অনুভব যখন মজলিশে জাহির করেছিলাম তখন অর্ণব লিঙ্ক চেয়েছিলেন মুভিটার। আমি অবাক হয়েছিলাম,লিঙ্ক দিয়ে বলেছিলাম, অতি খাজা মুভি। তার উত্তরে উনি জানান- "thanksআমার দেখার ইচ্ছে ছিল না খুব একটা কিন্তু আপনার খুব বাজে লেগেছে‚ তাই আমি confident আমার ভালো লাগবে| BB থেকে শুরু‚ পরে আরো অনেক কিছু দিয়ে বুঝেছি আমার যে গুলো বা যাদের খুব বাজে লাগে তারাই আপনার favourite and vice versaদেখি এবারো মেলে কিনা|" কেমন লেগেছিল মুভিটা তার ফিডব্যাক যদিও পাইনি তবুও আন্দাজ করে নিতে অসুবিধে হয়নি :))
তবুও এ পাতায় যোগ দিতে আমি একটুও কুন্ঠাবোধ করিনি। আর তার কারণ অর্ণবের সাথে যতই মতানৈক্য হোক, পরস্পরের প্রতি তিলমাত্র শ্রদ্ধার অভাব কখনো হয়নি। তাই অমত ছিল অথচ অশ্রদ্ধা ছিলনা কোনোদিন। মনে আছে একবার কথা চালাচালিতে মজলিশে অর্ণবকে জিজ্ঞেস করেছিলাম-
-" অর্ণব, দেখুন, আপনি লিখলেন আর সমাধান হাজির. আপনি কি বালার সম্পা? ঠিক কথা বলুন!" উত্তর এসেছিল,
-" আমি সম্পাদক হলে আপনার জ্বালাময়ী লেখাগুলো edit হতো না? :)-"
আমার আন্দাজকে সঠিক প্রমাণিত করে অর্ণব একদিন আড্ডার স্রষ্টা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তারপর থেকে এক বছর কেটে গেছে। মতামত নিয়ে আমাদের অবস্থান এখনো দুই মেরুতে কিন্তু আমার তরফ থেকে শ্রদ্ধা বেড়েই চলে। নিজের ব্যক্তিগত সময় বলিদান করে, দিনরাত এক করা কঠিন পরিশ্রম, আড্ডাকে শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার অসামান্য প্রচেষ্টায় অর্ণব একদিন আমাদের কাছে মি: রে হয়ে ওঠেন। আরো একটা ব্যাপার শ্রদ্ধার উদ্রেক করে। পুরাতন আড্ডায় অর্ণব কেবল একজন সদস্য ছিলেন, সাদা বা কালো, ওনার মতে যা যেমন তা নি:সঙ্কচে উচ্চারণ করতে বাঁধত না তাঁর। অপরদিকে আড্ডাঘরের মি:রে, সেই অবস্থান থেকে কিছুটা দূরে।বেশ খানিক পরিণত। দায়িত্বের গুরুভার পুরোটা না হলেও ওনাকে খানিকটাতো বদলেছেই। সম্পর্কের পুরোনো সমীকরণকে সরিয়ে রেখে সবাইকে আন্তরিকভাবে ডাক দিয়েছেন আডডাঘরের সূচনার দিন থেকেই। গত এক বছরে সদস্য সংখ্যা উত্তোরত্তর বেড়ে চলেছে। যাঁরা এখনো আসেননি, যাঁদের আমরা প্রতিনিয়ত মিস করছি তাঁদের অনুরোধ করব প্লিজ আসুন। মি: রে এর সাথে অমত পোষন করলে তেড়ে তর্ক করুন। আমি বলছি, লেখা এডিট হবেনা :)
মি: রে এর কাছে বিনম্র অনুরোধ রইলো, দায়িত্বের এই বিশাল কর্মকান্ড কখনো কখনো শ্বাসরোধ করে দেবে হয়ত কিন্তু মানুষের সহমর্মিতাকে অনুভব করতে আর সত্যিকারের শুভানুধ্যায়ী, আশীর্বাদককে চিনতে-বুঝতে যেন কোনদিন ভুল না হয়ে যায়। জীবনে তাঁরা বড়ই অপ্রতুল। অনেক শুভেচ্ছা আর শুভকামনা রইলো আড্ডাঘরের প্রথম জন্মদিনে আর আগামী দিনগুলির জন্য। আড্ডাঘরের জনপ্রিয়তা আপনার আর শ্রীময়ীর কাঁধে ভর দিয়ে আকাশের উচ্চতায় পৌঁছোক। আমেন!