৬ জুলাই‚ ২০১৫ এর রাত| অপন জেঠুকে জানালাম সাইট আত্মপ্রকাশের জন্য তৈরী‚ আপনি জানিয়ে দিতে পারেন সবাইকে| একবার শেষবারের গোটা কয়েক টেস্টিং করে ঘুমোতে চলে গেলাম|
মনের মধ্যে নানা আশঙ্কা ছিল| এক তো অপন জেঠু সবাইকে জানাবেন তো? আমার মনে আছে‚ বলেছিলেন দেরী হয়ে গিয়েছে| এখন সবাই fb মজলিশে মানিয়ে নিয়েছে‚ কেউ আসবে না| কথাটা মিথ্যে ছিল না| সবকিছুর ই একটা উপযুক্ত সময় থাকে and I was late| কেউ না আসলে‚ সাইটটা না চললে কি হবে ভেবে মন খারাপ করছিল কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি সেটা কাটিয়ে উঠলাম| চিরকালের pessimistic আমি| কিছু করার আগে failure path টা নিয়েই বেশী চিন্তা করি‚ ভেবেই রেখেছিলাম না চললে না চলবে‚ আমি তো শিখলাম কি করে website বানাতে হয়‚ সেটাই আমার return|
অবশ্য আশাও একটা ছিল| মনে মনে বিশ্বাস করতাম fb কোনদিন মজলিশের replacement হতে পারে না| দুটোর ই উপযোগিতা আছে আর এদের উদ্দ্যেশ্য ভিন্ন‚ coexistence টাই স্বাভাবিক| এই যেমন গুরুচণ্ডালি সাইট আর fb page দুটো ই রমরমিয়ে চলে - এটাই ভবিতব্য‚ এটাতে পূর্ণ বিশ্বাস ছিল|
যাই হোক‚ সেই রাতে স্বপ্ন এল| দেখলাম পাতাগুলো লেখায় ভরে গিয়েছে| ঠিক কখন ঘুম ভেঙেছিল মনে নেই‚তবে সে আমার সময়ের অনেক আগে| প্রথমেই মেইল খুলে দেখলাম অপন জেঠু fb মজলিশের একটা পাতার screen shot পাঠিয়েছেন‚ সেখানে ওনার পোস্ট আর তাতে সবার reaction| খুব তাড়াতাড়ি সাইটটা খুলে ফেলেই যে আনন্দ হল‚ সে আনন্দ জীবনে আর একবার ই হয়েছে (ISI interview তে বাঘা বাঘা অঙ্কের শিক্ষকদের সামনে অঙ্ক করতে পেরে)| এতজন আসবেন‚ লিখবেন‚ বিশ্বাস ই ছিল না|
এর পরে আমরা পেরিয়ে এসেছি দীর্ঘ পথ| একটা rudimentary খাঁচা থেকে এই সাইট অনেক দূর চলে এসেছে| এটা অহংকার নয়‚ পূর্ণ বিশ্বাস থেকেই বলতে পারি বাংলা ভাষায় এত feature rich আর কোন সাইট নেই| তবে এটাই সবচেয়ে গুরূত্বপূর্ণ কথা নয় ‚ গুরূত্বপূর্ণ হল এই যে সাইটের এই উন্নতিতে প্রায় প্রতিটি সদস্যের active contribution আছে| এই যে feature গুলো নিয়ে বুকের ছাতি উঁচু করলাম - এর প্রত্যকেটার concept টাই কিন্তু এসেছে সদস্যদের কাছ থেকে| আমি শ্রীকে মাঝে মাঝেই বলি coding করাটা হাতি ঘোড়া কিছু না‚ পয়সা ফেললেই coder পাওয়া যাবে কিন্তু সাইটের প্রাণ হলো concept.
যাই হোক‚ এই কথাগুলো তো অনেকদিন ধরেই বলে এসেছি| যেটা বলার জন্য আজকের লেখা - কোথায় চলেছি আমরা? কি করতে চাই? আমদের যাত্রা শুরু হয়েছিল‚ মজলিশের একটা replacement service হিসেবে‚ একটা বিদ্রোহ থেকে - সে সব উদ্যোগের ই একটা শুরুর গল্প থাকে‚ আমাদেরো আছে|
কিন্তু মজলিশ কোন একক সাইট ছিল না| ছিল an arm of bangalive| একক ভাবে শুধুই গল্প করা বা সুখ দু:খের খবর নেওয়ার কোন সাইট বেঁচে থাকতে পারে না| এই facebook, whatsapp এর যুগে তো পারেই না| জানি কিছু লোক আছেন‚ যাদের social networking ভালো লাগে না‚ না বয়স্কদের দিকে আঙুল তুলছি না| আমার এক এক batchmate কে চিনি‚ আজো fb নেই‚ আমি নিজেও whatsapp এ আসব না বলে বিদ্রোহী ছিলাম এক বছর আগেও - কিন্তু থাকা যায় না| দুনিয়াটা যখন পাল্টে যাচ্ছে দ্রুত‚ সেই পরিবর্তনকে অস্বীকার করে থাকা হয়তো যায় কিন্তু সে খুব সুখদায়ক নয়|
আমরা গুরুচণ্ডালি হতে চাই না‚ মননশীল লেখার জায়গাটা থাক| আমরা fb হতে চাই না‚ টুকটাক এক দুই লাইনের মেসেজ‚ লাইক পাওয়ার জন্য ঘন ঘন ছবি‚ এক দুই লাইনের বিদ্রোহ‚ অন্যের পোস্টকে শেয়ার করে দেওয়া - fb ছিল থাকবে| আমরা সত্যিকারের বাঙালী আড্ডার সাইট হয়ে উঠতে চাই|
মোহিতলালের একটা পোস্টের কথা খুব মনে পড়ছে| উনি লিখেছিলেন - বাঙালীদের জীবনে "খানা খায়া‚ মুভি দেখা" র বাইরেও কিছু থাকে| থাকে সত্যিই‚ এটাই আমাদের USP| আমাদের আড্ডা মানে শুধুই শরীর স্বাস্থ্যের খবর নেওয়া‚ হাল্কা লেগ পুলিং‚ দুটো ছবি দেওয়া নয় - আমাদের আড্ডাতে সত্যজিত‚ মৃণালের পাশাপাশি হাত ধরাধরি করে আসে জিমে দৌড়নোর গল্প‚ নো কার্ব খাব কি খাবো না‚ কোথায় ঘুরতে গেলাম বা কি নতুন রান্না করলাম‚ বুদ্ধ না মমতা‚ মোদী না কেজরিওয়াল‚ সুনীল না শীর্ষেন্দু সব কিছু| একথায় বাঙালীর আড্ডা content rich|
আমরা এই জায়গাটা ই নিতে চাই| content rich একটা সাইট কিন্তু আড্ডার মেজাজে| যেখানে শুধু মনের ক্ষিদেই মিটবে না‚ মিলবে শরীর স্বাস্থ্যের তত্ত্বতালাশ ও| রেসিপি দেখে রান্না করার ফাঁকে পড়ে নেওয়া যাবে উইকএন্ডে প্ল্যান করা সিনেমাটার রিভিউ| বেড়াতে যাবেন কোথায়‚ কি কি দেখবেন সবই পাওয়া যাবে আমাদের সবাইকার এই সাইটে| মিলবে মনস্তত্ত্বের হদিশ‚ সুন্দর সুন্দর ফটো গ্যালারি‚ পাক্ষিক ম্যাগাজিন ও| আর এই সব ই বানাবো আমরা সদস্যরা মিলে| কখনো দরকার হলে সাহায্য নেওয়া হবে কোন গেস্ট রাইটারের|
সঙ্গে থাকবেন তো‚ বন্ধুরা? জানার অপেক্ষায় রইলাম| শুভেচ্ছা সহ‚ অর্ণব (অরিন্দম রায়)