আজ থেকে ঠিক একটি বছর আগে আজকের দিনে আঁতুরঘরে চোখ মেলেছিল আমাদের এই একান্ত আপন আড্ডাঘর| দৃষ্টি তখন ঝাপসা‚ গায়ে তখনও লেগে আছে পেঁজা তুলোর মত কুয়াশা| যে কুয়াশায় আশা-নিরাশার স্পষ্ট ছাপ| গুটিকয় হাতে গোনা লোক তার আবির্ভাবে খুশী হয়েছিল| এসেছিলো এই পাতায় নির্দ্বিধায়| আগোছালো‚ অবিন্যস্ত পাতা একটু একটু করে নিজেকে গুছোতে শুরু করল ঐ সব মানুষদের সাথে নিয়ে| অনুভবে বুঝিয়ে দিল‚ এ তোমারও পাতা| তোমার মতামতকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হবে| তোমার অসুবিধে-সুবিধে সবই দেখবে এই পাতা| বুঝিয়ে দিল তোমাদের ছাড়া এই পাতা একটি পদক্ষেপও ফেলতে পারবে না| তোমরাই তার সম্পদ|
কে বানালো এই পাতা? কেন বানালো? কি দরকার ছিল তার ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবার?
আমরা তখন বিক্ষুব্ধ জনগণ| বালার নিরন্তর পরিবর্তনে বিরক্ত‚ হতাশাগ্রস্থ| আবেদন-নিবেদনেও কর্ণপাত যখন করলেন না বালার কর্তৃপক্ষ তখন আমাদের শ্রদ্ধেয় অপনকাকু প্রস্তাব আনলেন এমন একটা পাতা কি গড়ে তোলা যায় না‚ যেখানে আমরা সবাই প্রাণখুলে আড্ডা দিতে পারি‚ যেখানে আমাদের এমন কোন কতৃপক্ষ থাকবে না যে আমাদের কথায় কর্ণপাত করবে না| বালার পাতায় আই টি গাই-এর অভাব ছিল না| অনেকেই তো ছিলেন‚ নিতে পারতেন প্রাথমিক প্রচেষ্টা| কিন্তু কেই বা চায় নিজের অমূল্য সময় আর মেধা নষ্ট করতে? কিন্তু কেউ কেউ সত্যি চায়| আর যে চায় সে নিঃসন্দেহে অভাব অনুভব করে বাংলায় লেখার‚ পড়ার‚ ঝগড়া করার মত একটা প্ল্যাটফর্মের| আর সেই অভাববোধ থেকেই জন্ম হয়ত এই পাতার|
কিন্তু আমার মনে হয় এই যে বেরিয়ে গিয়ে একটা আলাদা অস্তিত্ব তৈরী করার জেহাদটা প্রথম দেখিয়েছিল ঋত্বিক| খুলে দিয়েছিল ফেসবুক মজলিশ| আমন্ত্রণ করে এনেছিল সেইসব মজলিশীদের যাদের জন্য একটা সময় বালার পাতা জ্বলজ্বল করত| কিন্তু তা সত্বেও আমরা অনেকেই অনুভব করেছিলাম যে ঋত্বিকের বানানো ফেসবুক মজলিশে লেখা দেওয়া‚ লেখা পড়ার যেমনই সুযোগ থাকুক না কেন‚ তা কখনই বালার সমকক্ষ অনুভুতির জন্ম দিত পারে না| অনেকটা ঐ সকালে চা খেতে খেতে খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে নেবার মত অনুভুতি‚ যেটা সারাদিন নিউজ চ্যানেল খুলে বসে থাকলেও হয় না| তাই আপনকাকু ডাক দিতে চলে এসেছিলাম এই পাতায় অন্য কয়েকজনের মত|
নতুন এ পাতায় তখন চুলচেরা বিশ্লেষন চলছে কে এই পাতা বানালো? তার কি উদ্দ্যেশ্য ইত্যাদি| চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে ফেসবুকের পাতাতেও| মেঘনাদের মত কেন সে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে? কেই বা স্পনসর করছে এই পাতাকে? শুধু শুধু আড্ডা দেবার জন্য এই পাতার সৃষ্টি নাকি কোন ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্য আছে ? আমিও কি এইসব ভাবছিলাম না? হয়ত ভাবছিলাম হয়ত নয়| আমি তো বরাবরই উচ্চকিত ছিলাম না সে ঐ পাতাতেই হোক বা এই পাতাতেই| নিজের সীমাবদ্ধতা আমি জানি| টুকটাক লেখা দেওয়া ‚ ব্যস মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত|
প্রথম থেকেই যে জিনিসটা ভালো লেগেছিল তা হল এই আড্ডাপাতার অ্যাডমিনের ব্যবহার যা আন্তরিকও যেমন তেমনই ভদ্র| প্রত্যেককে সমান গুরুত্ব দেওয়াটা খুব ভালো লেগেছিল| সেই প্রথম আমার নিজেকেও মনে হল আমিও একজন সদস্য| আমারও মতামতের গুরুত্ব আছে‚ যা এতদিন পর্যন্ত বালার পাতায় আমার মনে হয়নি| কারণ হয়ত ঐ পাতাটা আমাদের হয়েও আমাদের ছিল না‚ আর এই পাতাটা জন্ম লগ্ন থেকেই আমাদের এই অনুভুতি কাজ করছিল|
ধীরে ধীরে প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে এই পাতা একটু একটু করে নিজেকে মেলতে শুরু করল| আসতে শুরু করল আরও অনেকে| আর এই নিয়ে আসার পিছনে আমাদের সদস্যা শ্রী ম্যাডামের অবদান অনেকখানি| এই পাতার অ্যাডমিন ভেবেছিলেন তার তৈরী এই পাতায় আসতে অনেকেই আগ্রহ দেখাবে না| হ্য়ত ভুল ভাবেন নি| আমরা যারা এই পাতার গুটিকতক সদস্য তারাও তখন নিরন্তর ভাবছি‚ লোক না এলে বাড়ি জমজমাট হবে কি করে| শুধু তুমি আর আমি এই নিয়ে তো আর চলে না| শ্রী এল আর শ্রী সঙ্গে নিয়ে এল| পাতার সদস্য সংখ্যা বাড়ল| পাতাও নিজেকে রোজ উন্নত করতে শুরু করল| অাডমিন প্রথম দিন থেকেই এই পাতাকে উন্নত করার যে প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন সেটায় যেন বান এসে গেল|
এবার বুঝি প্রকাশ করার পালা| প্রকাশিত হলেন এতদিনের অ্যাডমিন| আর তার প্রকাশে অনেকই বিস্মিত হলেন আবার কেউ কেউ হলেন আপ্লুত‚ মিলে গেছে তার চিন্তাধারা কে এই অ্যাড্মিন| তিনি আর কেউ নন আদি আর অকৃত্রিম অর্নব ওরফে অরিন্দম রায়| এই অর্নব আমাদের চেনা অর্নব নয়| আইভিদি একবার বলেছিলেন লেখা পড়ে একটা মানুষকে যতটা বোঝা যায় ততটা আর কোন কিছু দিয়েই বোঝা যায় না| কিন্তু এক্ষেত্রে বুঝি সেটা মোটেই খাটে না| অর্নব নাকি অরিন্দম বলব‚ অরিন্দমই বলি| তার সাথে প্রথম পরিচয় আমার ছেঁড়া কিছু স্মৃতির পাতা থেকে ব্লগে| প্রথম আলাপে বেশ নরম সরম মনে হলেও মজলিশের পাতায় লেখা দেখে বেশ রুঢ় মনে হয়েছিল| কারও সাথেই যেন বনে না| এমনিতে মজলিশের মূল পাতায় আমি পড়া বাদে লেখা দেবার কথা ভাবতামই না| ওখানে কত তাবড় তাবড় লেখক লেখেন‚ আমার লেখা সেখানে পাত্তাও পাবে না| সেসব পুরোনো কাসুন্দি অনেকেই জানেন| কিন্তু আমার অবাক লেগেছিল যে লোকটা আমাকে মূল পাতায় লেখা দিতে উৎসাহিত করে‚ সেই লোকটাই এমন সূঁচ ফুটিয়ে দেওয়া লেখা লেখে কেন?
এপাতায় সেই অরিন্দম একদম বদলে গেল| অনেক বেশি প্রগলভ মনে হল| কোথায় গেল সেইসব সূঁচ ফোটানো লেখা? বরং অনেক বেশি সহনশীল‚ খোঁচা দিলেও রাগে না| এ পাতায় কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে যখন তর্ক বিতর্ক চলছে তখন তার লেখানী সংযত| যা অনেকের প্রশংসাই কুড়িয়েছে| অরিন্দম কি নিজে বদলে গেল? এ প্রশ্নের উত্তর একমাত্র তিনিই দিতে পারেন|
সে যাই হোক আমি সমালোচক নই‚ একজন এ পাতার সদস্যা| আমি চাইব এ পাতা দিনে দিনে আরও সমৃদ্ধ হোক| অরিন্দম আর শ্রী এদের সমস্ত উদ্যোগ সাফল্যমডিত হোক| জন্মদিনে এই হল আমার চাওয়া| ভালো থাকুক অরিন্দমের মানসপুত্র‚আমাদের পাতা আড্ডাঘর|